
গত ১৭ই জুন ভোলা থেকে ঢাকাগামী কর্ণফুলী-৪ লঞ্চ থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ হওয়া ভোলা সরকারি কলেজ ছাত্রদল নেত্রী সুকর্ণা আক্তার ইপ্সিতা'র মরদেহ ৪ দিন পর লক্ষ্মীপুর সংলগ্ন মেঘনা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ইপ্সিতার পরিবার মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়েছে ২২ই জুন বিকালে। তথ্যটি নিশ্চিত করছেন ইপ্সিতার বাবা মো.মাসুদ রানা।
রবিবার (২২ জুন) রাতে লক্ষ্মীপুর থানাধীন মেঘনা নদীতে ভাসমান অবস্থায় একটি মরদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা নৌপুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে তা ভোলা সদর মডেল থানাসহ বিভিন্ন থানায় জানায়। পরবর্তীতে লক্ষ্মীপুর নৌথানা মরদেহের পরিচয় পেতে বিলম্ব হওয়ায় ২২ই জুন সকালে আইনি প্রক্রিয়া শেষে লক্ষ্মীপুর আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম কর্তৃক মরদেহটি দাফন করা হয়৷ ভোলা সদর মডেল থানায় ইস্পিতার বাবার দায়ের করা সাধারণ ডায়েরির আলোকে থানা পুলিশ ইপ্সিতার পরিবারকে লক্ষ্মীপুর নৌথানায় এক নারীর মরদেহ পাওয়া গেছে মর্মে খবর দেয়। তাৎক্ষনাত ইস্পিতার বাবা মরদেহর ছবি দেখে নিশ্চিত হন তার মেয়ে৷
সুকর্ণা আক্তার ইপ্সিতা' ভোলা সরকারি কলেজ ছাত্রদল নেত্রী ও অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি কলেজ ছাত্রদল আসন্ন কাউন্সিলে গুরুত্বপূর্ণ পদ প্রার্থী ছিলেন৷ পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১৭ই জুন সকালের দিকে বাসা থেকে প্রাইভেট পড়ানোর নাম বলে বের হন তিনি৷ পরে আর সে বাসায় ফিরেনি। এ ঘটনায় ইস্পিতার বাবা মাসুদ রানা ভোলা সদর মডেল থানায় একদিন পর নিখোঁজ দাবি করে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইপ্সিতার সহপাঠীদের ভিতরে বিভিন্ন প্রকার প্রশ্ন করতে দেখা দেখা গেছে৷ কেউ বলছে এটি পরিকল্পিত হত্যা আবার কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করছেন ইপ্সিতা লঞ্চে ধর্ষণের শিকার হয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন৷ তবে এবিষয়ে ছাত্রদল নেত্রী ইপ্সিতার পরিবারের বক্তব্য, তারা কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন না। কিন্তু এটি হত্যা নাকী আত্মহত্যা তা তদন্ত করে বের করার দাবি জানাচ্ছেন তারা৷
এ বিষয়ে লঞ্চের সুপারভাইজার নান্টু বাবু জানান, ভোলার ইলিশা ঘাট থেকে সকাল সোয়া ১০টার দিকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে কর্ণফুলী-৪। কালিগঞ্জ ঘাট পার হওয়ার কিছু সময় পর তিনি খবর পান, এক নারী তৃতীয় তলা থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চটি ঘুরিয়ে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি গিয়ে লাইফবয়া ফেলা হয়। একবার ওই তরুণীকে নদীতে ভাসতে দেখা গেলেও কাছে পৌঁছানোর আগেই তিনি চোখের আড়াল হয়ে যান।পরে ঘণ্টাখানেক খোঁজাখুঁজির পর কোস্টগার্ডকে জানিয়ে লঞ্চটি ঢাকার পথে রওনা দেয়।
এ বিষয়ে কর্ণফুলী লঞ্চ কোম্পানির ম্যানেজার আলাউদ্দিন জানান, ১৭ই জুন সকালে কর্ণফুলী-৪ লঞ্চ থেকে মেহেন্দিগঞ্জের পরে ইলিশা থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে লঞ্চের তৃতীয় তলা থেকে এক তরুণী নদীতে ঝাঁপ দেয়। লঞ্চের মাস্টার খবর পেয়ে এক ঘন্টা ব্যাপী তাকে উদ্ধারের জন্য লঞ্চ বেক গিয়ার দিয়ে খোঁজাখুঁজি করে। তাকে না পেয়ে পরে লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে যায়৷ এ ঘটনায় লঞ্চে থাকা অন্য আরেক নারী ৯৯৯-এ কল দিয়ে ঝাঁপ দেওয়া তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ দেয়। পরে মুন্সিগঞ্জ সদর থানার পুলিশ ওই লঞ্চ থেকে দুজন স্টাফ ও অভিযোগকারীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়। ঘটনার প্রাথমিক তথ্য জেনে পরে পুলিশ তাদেরকে ছেড়ে দেয়।
এই ঘটনায় মুন্সিগঞ্জ থানার প্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম সাইফুল আলম জনকণ্ঠকে জানান, ১৭ তারিখ কর্ণফুলী-৪ লঞ্চ থেকে একটি নারী ধর্ষনের শিকার হয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করছে বলে ৯৯৯-এ অভিযোগ আসে৷ পরে পুলিশ ওই লঞ্চের দুই স্টাফ এবং অভিযোগকারীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে৷ ঘটনার তথ্যাদি সংগ্রহ করে তাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমানিত না হওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়৷
এ ঘটনায় লক্ষ্মীপুর নৌপুলিশের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাদের পাওয়া যায়নি।
রিফাত