
ছবি: সংগৃহীত
পেয়ারা ভারতের গ্রাম-শহরে সহজলভ্য একটি ফল। এর মিষ্টি স্বাদ ও পুষ্টিগুণের কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু পেয়ারা গাছের পাতা যে স্বাস্থ্যের জন্য এক অমূল্য সম্পদ, তা অনেকেই জানেন না। আমাদের দেশে যখন পেয়ারা পাতা ফেলে দেওয়া হয়, তখন আমেরিকার বাজারে এই পাতা রীতিমতো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। পেয়ারা পাতার ঔষধি গুণ এবং এর আন্তর্জাতিক চাহিদা নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন।
পেয়ারা পাতার পুষ্টিগুণ: পেয়ারা পাতা ভিটামিন সি, ফ্ল্যাভোনয়েড, পলিফেনল, ক্যারোটিনয়েড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য, যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। গবেষণায় দেখা গেছে, পেয়ারা পাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, হজমশক্তি বৃদ্ধি, ত্বক ও চুলের যত্ন এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই পাতার নির্যাস ডায়রিয়া, গ্যাস্ট্রিক আলসার এবং মুখের সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: পেয়ারা পাতার চা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এতে থাকা কোয়ারসেটিন এবং ফ্ল্যাভোনয়েড ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত পেয়ারা পাতার চা পান করলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের উপকার হয়।
হজমশক্তি উন্নতি: পেয়ারা পাতায় থাকা ফাইবার এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান পেটের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া এবং গ্যাসের সমস্যা কমায়। পেয়ারা পাতা ফুটিয়ে সেই পানি পান করলে পাচনতন্ত্র সুস্থ থাকে।
মুখের স্বাস্থ্য: পেয়ারা পাতা চিবালে বা এর পানি দিয়ে কুলি করলে মাড়ির সমস্যা, দাঁত ব্যথা এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ মুখের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
ত্বক ও চুলের যত্ন: পেয়ারা পাতায় থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বলিরেখা কমায় এবং ত্বকের জেল্লা বাড়ায়। এছাড়া, পেয়ারা পাতার পানি দিয়ে মাথা ধুলে চুল পড়া কমে এবং চুলের গোড়া মজবুত হয়।
ক্যান্সার প্রতিরোধ: পেয়ারা পাতার নির্যাস ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে সহায়ক। এতে থাকা লাইকোপিন এবং ভিটামিন সি ফ্রি রেডিক্যালের ক্ষতি থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
আমেরিকায় পেয়ারা পাতার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের মধ্যে প্রাকৃতিক উপাদানের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির কারণে পেয়ারা পাতার চা, নির্যাস এবং ক্যাপসুল বাজারে এসেছে। আমেরিকার সুপারমার্কেট এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পেয়ারা পাতার পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এই পাতা চা, ত্বকের যত্নের পণ্য এবং ঔষধি সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আমেরিকার স্বাস্থ্য খাদ্য দোকানে পেয়ারা পাতার প্যাকেট ১০ থেকে ২০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, পেয়ারা পাতার তেল এবং ক্রিমও ত্বকের যত্নে জনপ্রিয়।
আমেরিকায় এর চাহিদা বৃদ্ধির পেছনে এর প্রাকৃতিক ঔষধি গুণ এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি কম হওয়া অন্যতম কারণ। বিশেষ করে, ডায়াবেটিস রোগী এবং ওজন কমাতে আগ্রহী ব্যক্তিদের মধ্যে এর চাহিদা বেশি। এই পাতা আমেরিকায় আমদানি করা হচ্ছে প্রধানত দক্ষিণ আমেরিকা, এশিয়া এবং ক্যারিবীয় অঞ্চল থেকে।
ভারতে পেয়ারা গাছ প্রায় প্রতিটি গ্রামে পাওয়া যায়। কিন্তু এর পাতার বাণিজ্যিক ব্যবহার এখনও তেমন শুরু হয়নি। আমেরিকার বাজারে পেয়ারা পাতার চাহিদা দেখে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা এই খাতে বিনিয়োগ করতে পারেন। পেয়ারা পাতা শুকিয়ে, গুঁড়ো করে বা চায়ের প্যাকেট তৈরি করে রপ্তানি করা যেতে পারে। এতে কৃষকদের আয় বাড়বে এবং দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ভারতের গ্রামীণ অঞ্চলে পেয়ারা পাতার ঔষধি ব্যবহার প্রচলিত আছে। অনেকে ডায়রিয়া, দাঁত ব্যথা এবং ত্বকের সমস্যার জন্য পেয়ারা পাতা ব্যবহার করেন। তবে, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই পাতার নির্যাস থেকে ওষুধ, চা বা সৌন্দর্য পণ্য তৈরি করা যেতে পারে। সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে এই খাতে প্রশিক্ষণ ও বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন।
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
পেয়ারা পাতার চা: ৫-৬টি কচি পেয়ারা পাতা জলে ফুটিয়ে ছেঁকে নিন। এই চা দিনে একবার পান করলে ডায়াবেটিস এবং হজমের সমস্যা কমবে।
ত্বকের যত্নে: পেয়ারা পাতা বেটে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগালে ত্বকের দাগছোপ কমে।
চুলের যত্নে: পেয়ারা পাতা ফুটানো জল দিয়ে মাথা ধুলে চুল পড়া কমে।
সতর্কতা ও অপকারিতা: পেয়ারা পাতার উপকারিতা অনেক হলেও অতিরিক্ত ব্যবহারে কিছু সমস্যা হতে পারে। অতিরিক্ত পেয়ারা পাতার চা পান করলে পেটে ব্যথা বা ডায়রিয়া হতে পারে। যারা নিম্ন রক্তচাপের সমস্যায় ভোগেন বা নির্দিষ্ট ওষুধ সেবন করেন, তাদের পেয়ারা পাতা ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শহীদ