
ছবি: সংগৃহীত
এক সময় 'ভেরিফায়েড' শব্দটির মানে ছিল শুধুই পরিচয়ের নিশ্চয়তা। কিন্তু বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই একটি শব্দই হয়ে উঠেছে খ্যাতি, প্রভাব ও সামাজিক মর্যাদার প্রতীক। নীল ব্যাজ, লক্ষাধিক ফলোয়ার, সাজানো জীবনের নিখুঁত ছবি—সব মিলিয়ে গড়ে উঠছে এক নতুন ভার্চুয়াল সমাজ, যার সঙ্গে বাস্তব জীবনের সাদৃশ্য দিন দিন কমে যাচ্ছে।
ফিল্টারের আড়ালের জীবন
বর্তমান ডিজিটাল যুগে অনেকের কাছেই অনলাইন পরিচয়ই যেন প্রধান হয়ে উঠেছে। বাস্তবে হয়তো তিনি একজন সাধারণ মানুষ, যার জীবনেও আছে ব্যর্থতা, সংগ্রাম ও নিরবতা। কিন্তু তার অনলাইন সত্তায় তিনি এক ‘আইকন’—সফল, সুখী, পরিপাটি। এই দ্বৈত জীবনধারা আমাদের সমাজে একটি ভিন্ন মাত্রা তৈরি করছে, যা ধীরে ধীরে বাস্তবতাকে ঢেকে দিচ্ছে।
তরুণ সমাজ কোন পথে?
এই 'ভেরিফায়েড কালচার'-এর সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ছে তরুণদের ওপর। তারা এখন সাফল্য মাপছে লাইক, শেয়ার, কমেন্ট আর ফলোয়ার দিয়ে। তাদের মধ্যে বেড়ে যাচ্ছে একটি কৃত্রিম জীবনের প্রতি আকর্ষণ। তারা ভাবছে—যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় না হওয়া যায়, তবে জীবন বৃথা। ফলে নিজেদের বাস্তব অবস্থার সঙ্গে এই অনলাইন আদর্শের ফারাক বুঝতে না পেরে হতাশায় ভুগছে অনেকে। তৈরি হচ্ছে হীনমন্যতা, আত্মবিশ্বাসহীনতা ও মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা। অথচ এই সমস্যাগুলো সমাজে প্রকাশও পাচ্ছে না, কারণ সবাই ব্যস্ত নিজেদের সাজানো জীবন দেখাতে।
বাস্তব জীবনের প্রয়োজনীয়তা
এই প্রশ্ন এখন খুবই প্রাসঙ্গিক—আমরা কি আমাদের বাস্তবতা হারিয়ে ফেলছি? জীবন তো সবসময় নিখুঁত নয় বরং ব্যর্থতা আর অস্পষ্টতাতেই তো জীবনের আসল সৌন্দর্য। সেই অনির্বচনীয় অনুভূতিগুলোই তো আমাদের মানুষ করে তোলে।
'ভেরিফায়েড লাইফ' আমাদের যে একমুখী, ফিল্টারধর্মী সমাজের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তা কি দীর্ঘমেয়াদে আমাদের মানসিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থানকে দুর্বল করছে না?
সমাধান কোথায়?
প্রয়োজন এক ধরনের ভারসাম্য—যেখানে প্রযুক্তির সুফল গ্রহণ করেও বাস্তব জীবনের সৌন্দর্যকে ভুলে না যাওয়া যায়। সোশ্যাল মিডিয়া হোক যোগাযোগের মাধ্যম, প্রতিযোগিতার নয়। তরুণদের শিখতে হবে—জীবনের আসল সাফল্য সংখ্যা দিয়ে মাপা যায় না বরং মাপা যায় মূল্যবোধ, কাজের প্রভাব ও মানবিকতায়।
একটি সমাজ যখন ভার্চুয়াল পরিচয়কে বাস্তবতার চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করে, তখন তা নতুন সংকটের জন্ম দেয়। সোশ্যাল মিডিয়ার 'ভেরিফায়েড' সমাজে আমরা যেন নিজের অচেনা সংস্করণে রূপ নিচ্ছি। সময় এসেছে, নিজেকে ফিরে দেখার।
আসিফ