
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামী ২৬ জুন থেকে। দেশের অন্যান্য এলাকার ন্যায় পরীক্ষা উপলক্ষে ইতোমধ্যে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা। চলতি বছর বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ৩৪৯টি কলেজের ৬১ হাজার ২৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।
পরীক্ষার প্রস্তুতি স্বচোখে দেখতে এবং পরীক্ষার্থীদের পড়াশুনাসহ শিক্ষার্থীদের সবধরনের খোঁজখবর নিতে গত কয়েকদিন থেকে মধ্যরাতে একজন দায়িত্বশীল অভিভাবকের ন্যায় শিক্ষার্থীদের বাড়িতে বাড়িতে ছুটে চলছেন বরিশালের উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আলী সুজা।
শিক্ষার জন্য নিবেদিত এ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো জ্বালাতে নিজের দায়িত্ববোধ থেকে ছুটে চলেছেন উপজেলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের পরীক্ষার্থীদের বাড়িতে বাড়িতে।
শিক্ষাবান্ধব উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আলী সুজা পরীক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। তাদের কোন কোন বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে জানতে চান। সম্পূর্ণ নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে মর্মে ভালো করে প্রস্তুতি গ্রহণের পরামর্শ দেন।
শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যার পরে যেন বাসার বাহিরে না থাকে সেজন্য অভিভাবকদের সাথে কথা বলেন। নিয়মিত সন্তানদের খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য ইউএনও অভিভাবকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন।
মো. আলী সুজা উজিরপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে নিজেকে শুধু প্রশাসনিক কাজেই সীমাবদ্ধ রাখেননি বরং উপজেলায় শিক্ষার মানোন্নয়ন ও সচেতনতা বৃদ্ধি, সরেজমিনে সরকারের প্রতিটি উন্নয়ন কাজের তদারকিসহ বেশ কিছু ব্যতিক্রমধর্মী কার্যক্রম শুরু করে ইতোমধ্যে সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন।
তারই অংশ হিসেবে তিনি (ইউএনও) শুরু করেছেন রাত্রিকালীন হোম ভিজিট কার্যক্রম। প্রতিদিন রাত আটটা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তিনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের বাড়িতে বাড়িতে যাচ্ছেন। উদ্দেশ্য একটাই, পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগী করে তোলা, সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ এবং অভিভাবকদের সাথে সরাসরি কথা বলা।
হোম ভিজিটকালে ইউএনও মো. আলী সুজা পরীক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন, তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতির খোঁজ নেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি অভিভাবকদেরও পরামর্শ দেন কীভাবে সন্তানদের আরও ভালোভাবে পড়াশোনায় মনোযোগী করা যায়। যা শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করছে।
ইউএনও মো. আলী সুজাকে একজন শিক্ষাবান্ধব কর্মকর্তা হিসেবে আখ্যা দিয়ে অভিভাবকরা জানিয়েছেন, ইতোপূর্বে এমনটি তারা কখনও দেখেননি। ইউএনও'র এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগে আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ।
অভিভাবকরা আরও বলেছেন, একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাড়িতে এসে পরীক্ষার্থীদের খোঁজখবর নেওয়া নিঃসন্দেহে শিক্ষাক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।
এইচএসসি পরীক্ষার্থী এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ইউএনও স্যার আমাদের বাসায় এসে সন্তানের পড়ালেখার খোঁজ নিয়েছেন, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের ও আনন্দের। এতে আমরা যেমন উৎসাহিত হয়েছি, তেমনি আমার সন্তান পড়াশুনায় আগের চেয়ে আরও মনোযোগী হয়েছে।
একজন শিক্ষার্থী জানিয়েছে, ইউএনও স্যার আমাকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হতে বলেছেন। তার এ উৎসাহে আমি অনেক অনুপ্রাণিত হয়েছি। তাই এখন পড়াশোনায় আগের চেয়ে আরও মনোযোগ দিচ্ছি।
উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আলী সুজা জনকণ্ঠকে বলেন, শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে না পারলে আগামী প্রজন্ম পিছিয়ে যাবে। তাই শিক্ষার্থীরা যেন পরীক্ষাকে ভয় না পায়, হতাশ কিংবা চাপ অনুভব না করে। যে বিষয়েগুলোতে দুর্বলতা আছে সেটা যেন বিশেষ গুরুত্ব দেয় এবং সময়কে যেন সঠিকভাবে কাজে লাগায়। এছাড়া পরীক্ষায় কিভাবে একজন পরীক্ষার্থীকে তৈরি করতে হয়, সেভাবে উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলাই হচ্ছে আমার হোম ভিজিটের মূল উদ্দেশ্য।
ইউএনও মো. আলী সুজা আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য শুধু প্রশাসনিক দিক নয়; শিক্ষাক্ষেত্রেও একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনা। এই উদ্যোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মনিটরিং, উৎসাহ প্রদান এবং শিক্ষার প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধিই আমার মূল উদ্দেশ্য। আমাদের শিক্ষার্থীরা যদি বইমুখী হয়, নিয়মিত পড়াশোনা করে, তাহলে তারা ভবিষ্যতে আরও ভালো করবে। তাই এ কার্যক্রম চলমান থাকবে এবং ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারিত হবে।
এ ব্যাপারে বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের বাড়িতে বাড়িতে রাত্রীকালিন হোম ভিজিট কার্যক্রম অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও গ্রহণযোগ্য উদ্যোগ। এতে নিঃসন্দেহে শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে।
তিনি আরও বলেন, উজিরপুরের ন্যায় এধরনের উদ্যোগ অন্যান্য উপজেলাগুলোতে ছড়িয়ে পরলে আগামীদিনে বরিশালজুড়ে শিক্ষার মান উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
আফরোজা