ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

হালদা নদীতে ফের ব্রুড মাছের মৃত্যু, পরিবেশ দূষণ ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ দায়ী হতে পারে

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফটিকছড়ি

প্রকাশিত: ০০:২৬, ২৩ জুন ২০২৫; আপডেট: ০০:২৬, ২৩ জুন ২০২৫

হালদা নদীতে ফের ব্রুড মাছের মৃত্যু, পরিবেশ দূষণ ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ দায়ী হতে পারে

এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদী থেকে রবিবার (২২ জুন) সকালে ভেসে ওঠা অবস্থায় দুটি মৃত কাতলা প্রজাতির ব্রুড মাছ উদ্ধার করা হয়েছে।

হাটহাজারীর রামদাস মুন্সিরহাট এলাকায় স্থানীয়দের সহায়তায় হালদা নদী থেকে মাছ দুটি উদ্ধার করেন নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সাব-ইন্সপেক্টর রমজান আলী। পরে রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর আজাদীর সহায়তায় মৃত মাছ দুটি পাঠানো হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে।

মাছ দুটি ওজনেও বেশ বড় ছিল। একটির ওজন ১২ কেজি ৮৫০ গ্রাম এবং অপরটির ওজন ৮ কেজি ৩৫০ গ্রাম বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রজননের সময় ব্রুড মাছগুলো শারীরবৃত্তীয়ভাবে দুর্বল থাকে। এই সময় হরমোনজনিত চাপ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে তারা সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ে। এর ফলে এরোমোনাস নামক একটি সুযোগসন্ধানী ব্যাকটেরিয়া সহজেই এসব দুর্বল মাছকে আক্রান্ত করতে পারে।

গত বছরও হালদা নদীতে জুন মাসে সাতটি ব্রুড মাছের মৃত্যু হয়েছিল। চলতি বছরের এই মৃত্যুর পেছনেও দূষণ ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দায়ী বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি কোরবানির গরুর চামড়া, নাড়িভুঁড়ি নদীতে ফেলার কারণে পানির মান মারাত্মকভাবে নষ্ট হয়েছে। তার ওপর টানা বৃষ্টির ফলে বিভিন্ন কৃষি ও শিল্প বর্জ্য, জৈব পদার্থ নদীতে প্রবাহিত হয়ে পানির রঙ পরিবর্তন করে ফেলে। এতে পানিতে এমোনিয়ার মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যায়, যা ইউট্রোফিকেশন নামে পরিচিত।

হালদা নদী থেকে সংগ্রহ করা মৃত মাছগুলোতে এরোমোনাস সংক্রমণের বেশ কিছু লক্ষণ দেখা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে—ত্বকে লাল ঘা বা আলসার, পাখনার গোড়া পচে যাওয়া, ফুলকা ফ্যাকাশে বা পচন ধরা, পেট ফোলা ও চোখ ফুলে যাওয়া।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পরিবেশ দূষণ এবং হরমোনজনিত দুর্বলতা মিলিয়ে এরোমোনাস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণেই ব্রুড মাছ দুটি মারা গেছে। বিষয়টি আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণের জন্য পরীক্ষাগারে পর্যালোচনা চলছে।

হালদার পরিবেশ রক্ষায় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন গবেষকরা। নিয়মিত মনিটরিং ও দূষণ রোধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন পরিবেশ ও মৎস্য বিশেষজ্ঞরা।

মিমিয়া

×