
মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নে সরকারি কাবিখা, কাবিটা ও টেস্ট রিলিফ (টি.আর) প্রকল্পে শ্রমিকের পরিবর্তে মেশিন দিয়ে কাজ করায় স্থানীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠী উপকৃত হচ্ছে না। ‘কাজের বিনিময়ে খাদ্য’ বা ‘কাজের বিনিময়ে টাকা’ দেওয়ার যে লক্ষ্য নিয়ে এসব প্রকল্প নেওয়া হয়, বাস্তবে তার কোন প্রতিফলন নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মাহমুদপুর ইউনিয়নে তিনটি রাস্তা সংস্কারের জন্য কাবিটা প্রকল্পে ৩ লাখ টাকা, কাবিখা প্রকল্পে ৩ মেট্রিক টন গম এবং টি.আর প্রকল্পে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব প্রকল্পের মধ্যে চরগোবিন্দী এলাকার কয়েকটি সড়ক সংস্কারের কাজ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
কিন্তু সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ সড়কে কোনো দৃশ্যমান কাজ হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, প্রকল্পের সভাপতি ইতোমধ্যেই অগ্রিম বিলের অর্ধেক তুলে নিয়েছেন, অথচ শ্রমিক দিয়ে কাজ না করিয়ে এস্কেভেটর (স্থানীয়ভাবে ‘ভেকু’) দিয়ে দ্রুত কাজ শেষ দেখানো হয়েছে।
ইউপি সদস্য ও প্রকল্প সভাপতি বাহাদুর মিয়া জানান, “ভেকু দিয়ে ঘণ্টায় ১২০০ টাকায় রাস্তার মাটি কেটেছি।” তিনি স্বীকার করেন, প্রকল্পে শ্রমিকের মাধ্যমে কাজ করার নিয়ম থাকলেও বাস্তবে তা মানা হয়নি।
এদিকে রাস্তার পাশে থাকা কৃষিজমির মালিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, তাদের অনুমতি ছাড়াই জমির মাটি কাটা হয়েছে। কেউ কেউ জানান, বাধ্য হয়ে কাঁচা ধান কেটে জমি ছেড়ে দিতে হয়েছে, অথচ এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ডা. সুকুমার রায় বলেন, “কাবিখা, কাবিটা প্রকল্পে শ্রমিক দিয়ে কাজ করতেই হয় এমন নিয়ম নেই, তবে দূর থেকে মাটি আনা সম্ভব না হওয়ায় পাশের জমি থেকেই নেওয়া হয়ে থাকতে পারে। কৃষকদের মাটির টাকা দেওয়া হয়নি—এটা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবো।”
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান সুমন জানান, “আমি যখন সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়েছি, তখন কোনো মেশিন দেখিনি। প্রকল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত পরবর্তী বিল অনুমোদন দেওয়া হবে না।”
মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এম. আলমগীর বলেন, “সব প্রকল্প ঘুরে দেখা সম্ভব হয় না। সাধারণত ১০ শতাংশ প্রকল্প সরেজমিনে পরিদর্শন করি। অভিযোগ পেয়েছি—তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সরকারি এসব প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল হতদরিদ্র মানুষের জন্য কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ের অব্যবস্থাপনা, স্বজনপ্রীতি ও নজরদারির অভাবে প্রকৃত উপকারভোগীরা উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছেন—এমনটাই বলছেন এলাকাবাসী।
Mily