.
ছাত্ররাজনীতি ঘিরে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের পর থেকে অচল হয়ে পড়েছে খুলনা প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)। প্রায় চার মাস ধরে ক্যাম্পাস বন্ধ। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন ভিসি মাসুদুর রহমান। পরে নতুন ভিসি অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলীকে নিয়োগ দেওয়ার পর নানান জটিলতার মুখে তিনিও পদত্যাগ করেন। এবার ঈদুল আজহায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন হয়নি। এদিকে, আন্দোলন শেষে শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ হলেও শিক্ষকদের দাবি পূরণ হয়নি। তবে, ২৬ জুনের পর দ্রুতই ভিসি নিয়োগ যেকোন সময় হতে পারে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
জানা যায়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনায় ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে চলছে অচলাবস্থা। পরে শিক্ষার্থীদের এক দফা আন্দোলন ও আমরণ অনশনের প্রেক্ষিতে গত ২৫ এপ্রিল উপাচার্যকে অপসারণ করে সরকার। ১ মে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলীকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ মে থেকে ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরেননি শিক্ষকরা। ছাত্রদের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিতের বিচার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরবেন না বলে জানায় কুয়েট শিক্ষক সমিতি। গত ২১ মে ড. মো. হযরত আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর থেকে অচল অবস্থায় রয়েছে কুয়েট বিশ্ববিদ্যালয়। একদিকে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বন্ধ, অন্যদিকে প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির রয়েছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা চলছে টানা চার মাস ধরে। একাডেমিক কার্যক্রম এবং আর্থিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল আর্থিক বিষয়ের অনুমোদন দেন। ফলে, উপাচার্য না থাকায় প্রায় ১১শ’ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মে মাসের বেতনসহ পবিত্র ঈদুল আজহার উৎসব ভাতা পাননি। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬শ’ কোটি টাকার চলমান উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের বিলও আটকে রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা বলেন, ক্লাসে শিক্ষকরা ফিরতে চান। আমরাও চাই প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু হোক। কিন্তু যেখানে সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষকরা লাঞ্ছনার শিকার হন সেখানে কিছুই বলার থাকে না। এই জায়গাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে একটি মহল শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করেছে। বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে শিক্ষকদের সঙ্গে বেয়াদবি করানো উচিত হয়নি। কুয়েটে একটি ভীতিকর অবস্থা তৈরি করা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও আতঙ্কে থাকেন। কোন সূত্র ধরে আবার কোন ফ্যাসাদে ফাসানো হবে- এমন আতঙ্কে প্রায় সবাই।
১৯তম ব্যাচের তানিম হাসান বলেন, চার মাস ধরে পরীক্ষা আটকে আছে। তিন বছর আট মাসে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার স্বপ্ন ছিল। এখন সেটা বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ধনী-গরীব সবাই পড়ে। সবার পারিবারিক সামর্থ এক নয়। অনেকেই চাকরি বা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ হারাচ্ছেন শুধু একটি পরীক্ষার অপেক্ষায়। আমরা শিক্ষকদের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাই, দয়া করে দ্রুত ক্যাম্পাস খুলে পরীক্ষা নিন। আমাদের ভবিষ্যৎ থমকে আছে।
কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. ফারুক হোসেন বলেন, দীর্ঘদিনের জটিলতা কাটিয়ে আমরাও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে চাচ্ছি। ভাইস চ্যান্সেলর না থাকায় কুয়েটের কার্যক্রম অচল অবস্থায় রয়েছে। তবে, ২৬ জুনের মধ্যে ভিসি নিয়োগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। খুব শীঘ্রই নতুন ভিসি আসবেন। তিনি আরও বলেন, আজ শিক্ষক সমিতির মিটিং আছে। সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হবে। এ বিষয়ে কথা বলতে খুলনা প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) রেজিস্ট্রার ইঞ্জিনিয়ার আনিসুর রহমান ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
প্যানেল
