
ছবি: জনকণ্ঠ
পাইকগাছার লতার শংকরদানা সরকারি খালে অবৈধভাবে বাঁধ এবং নেট-পাটা দিয়ে মাছ চাষ করায় মৌসুমের প্রথম বর্ষায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ২ থেকে ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খালে কমপক্ষে ১০টি খণ্ড করে মাছ চাষ করছে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি। ফলে টানা কয়েকদিনের বর্ষায় তলিয়ে গেছে অনেকের বসতবাড়ি ও যাতায়াতের পথ। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুরো বর্ষা মৌসুমের আগেই অবৈধ বাঁধ ও নেট-পাটা অপসারণ না করলে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে এবং এতে পানি বন্দী হয়ে পড়বে ৩ গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হবে সরকারি পিচের রাস্তা (নির্মাণ কাজ চলমান)।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার লতা ইউনিয়নের হাড়িয়া ওয়াপদা থেকে হাড়িয়া খাসমহল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত ২ থেকে ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের শংকরদানা নামে একটি সরকারি খাস খাল রয়েছে। এ খাল দিয়ে শংকরদানা, হাড়িয়া এবং সচিয়ারবন্দসহ বিভিন্ন এলাকার পানি নিষ্কাশন হয়ে থাকে। খালটি চলতি মৌসুমে স্থানীয় প্রশাসন থেকে খাস আদায়ের জন্য প্রদান করা হলেও একাধিক ব্যক্তি খাস আদায়ের জন্য ব্যক্তিকে হারি দিয়ে কয়েকটি খণ্ডে ভাগ করে বাঁধ এবং নেট-পাটা দিয়ে মাছ চাষ করছে।
শনিবার সকালে সরেজমিনে গেলে কমপক্ষে ১০টি খণ্ডে বাঁধ ও নেট-পাটা দিয়ে মাছ চাষ করার চিত্র দেখা যায়। শুরুতেই রয়েছে ক্লিনটন বিশ্বাস, এরপর ধারাবাহিকভাবে পঙ্কজ কুমার, দীপঙ্কর, বাবু লাল বিশ্বাস, বরুণ বিশ্বাস, স্বজল, সমীর কুমার মন্ডল, অসীম কুমার সরকার ও সত্যনন্দ।
এ সময় এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, এটিই একমাত্র অত্র এলাকার পানি সরবরাহের সরকারি খাল। খালের বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ ও নেট-পাটা দেওয়ার ফলে পানি সরানোর পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, পানি সরে যাওয়ার কোন ব্যবস্থা না থাকায় মৌসুমের শুরতেই বসতবাড়িতে লবণ পানি উঠে গেছে। মমতা সরকার জানান, টানা কয়েকদিনের বর্ষায় বসতবাড়ির উঠানে পানি উঠে গেছে। ফলে ছোট ছোট বাচ্চারা কাদা পানির মধ্যে চলাফেরা করছে। ঝর্ণা শীল বলেন, বাড়ির সামনের অংশে দীপঙ্কর বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে। তিনি পানি কমানোর কোনো চেষ্টায় করেন না। ফলে যাতায়াতের পথ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে আমাদের ভোগান্তি বেড়েছে।
নারায়ণ চন্দ্র শীল বলেন, বর্ষার শুরতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এখনই কোন ব্যবস্থা না নিলে পরবর্তীতে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে। সত্যরঞ্জন সরকার বলেন, মাত্র কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে অনেকের বসতবাড়ি ও যাতায়াতের পথ তলিয়ে গেছে। এখনই বাঁধ ও নেট-পাটা অপসারণ না করলে পুরো বর্ষা মৌসুমে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। তখন ৩ গ্রামের শত শত পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়বে। মৎস্য লীজ ঘেরসহ আমন ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া বর্তমানে কোটি টাকা ব্যয়ে খালের ধারের যে রাস্তা কার্পেটিং করা হচ্ছে তা নষ্ট হয়ে সরকারের বিপুল পরিমাণ টাকার আর্থিক ক্ষতি হবে।
এ প্রসঙ্গে ক্লিনটন বিশ্বাস বলেন, আমার অংশে আমি সবসময় পানি কমিয়ে রাখি। তবে অনেকের পানি সরানোর ব্যাপারে অনিহা আছে, এমন অভিযোগ করেন তিনি।
এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সুনীল কুমার মন্ডল বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কয়েক কোটি ব্যয়ে এলাকার যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটির কার্পেটিং কাজ চলমান রয়েছে। এই রাস্তাটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমাদের সকলের। কোন ভাবেই যাতে রাস্তাটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এজন্য সবাই মিলে খালের পানি কমিয়ে রাখতে হবে। পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সরকারি ভাবে যদি কোন উদ্যোগ নেওয়া হয় আমরা সকলে মিলে সে কাজে সহযোগিতা করবো বলে তিনি জানান।
বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে বলে জানিয়েছেন উপসহকারী প্রকৌশলী স্বজল বিশ্বাস। পুরো বর্ষা মৌসুমের আগেই অবৈধ বাঁধ ও নেট-পাটা অপসারণে স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন, এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
শহীদ