ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ

প্রকাশিত: ২০:৪১, ২৪ জুন ২০২৫

ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ

ধর্ষণ একটি মারাত্মক দণ্ডনীয় ফৌজদারি অপরাধ। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ৯ ধারা অনুসারে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। তদুপরি অন্তর্বর্তী সরকার গত ২৫ মার্চ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করেছে। এতে ৯ (খ) ধারা সংযোজন করে ‘বিয়ের প্রলোভনের মাধ্যমে যৌন কর্ম করিবার দণ্ড’ ধারা যুক্ত করে এটাকে ধর্ষণের মূল ধারায় ৯-এ (ধর্ষণ, ধর্ষণজনিত কারণে মৃত্যু-ইত্যাদি) শাস্তি আলাদা করা হয়েছে। সরকারের যুক্তি, এতে ৯ ধারায় যুক্ত হওয়া গুরুতর ধর্ষণের মামলার জট কমবে এবং দ্রুত বিচার সম্ভব হবে। সংশোধিত আইনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিশেষ করে শিশু ধর্ষণ মামলার বিচার আলাদাভাবে করা যাবে। তদুপরি কোনো বিশেষ বাস্তবতায় আদালত যদি মনে করেন, ডিএনএ পরীক্ষার সনদ ছাড়াই চিকিৎসা সনদ ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষীর ভিত্তিতে বিচার সম্ভব, তাহলে আদালত ডিএনএ সনদ ছাড়াই বিচার করতে পারবেন। সে সময় দেশব্যাপী বহুল আলোচিত মাগুরার একটি শিশু ধর্ষণোত্তর ঢাকার সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে অন্তর্বর্তী সরকার ধর্ষণ মামলার দ্রুত বিচার ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করে।
এতো কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে যে, নারী ও শিশু নিপীড়ন তথা ধর্ষণ বাড়ছেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত বিচারও হচ্ছে না, মৃত্যুদণ্ড তো দূরের কথা। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ২০২৪ সালে নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে মামলা হয়েছে ১৭ হাজার ৫৫১টি। এর মধ্যে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। সে সংখ্যা ৪ হাজার ২৩২টি। তদুপরি ঐ নয় মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের মোট মামলার ৩৪ শতাংশই ছিল ধর্ষণের। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ধর্ষণ ফৌজদারি অপরাধ বিধায় ধর্ষকের সঙ্গে ভুক্তভোগীর বিয়ে দেওয়ার জন্য গ্রাম্য সালিশ অথবা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আদেশ দেওয়ার পরিবর্তে আদালতের উচিত ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিত করা। যে ব্যক্তির মাধ্যমে মেয়েটিকে অপমানিত করা হলো তার সঙ্গে বিয়ে মর্যাদাহানিকর। এসব বিয়ে টেকে না। এসব ক্ষেত্রে নিজের অধিকার পেতে হলে মেয়েদেরও দায়িত্ব ও মর্যাদার বিষয়ে সচেতন হতে হবে। প্রতারণার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে ধর্ষিতা ও পরিবারকে।
ধর্ষণের সংজ্ঞা বৈষম্যহীন করতে নারী ও শিশু শব্দের পরিবর্তে ‘ব্যক্তি’ লেখার দাবি উঠেছে। নারী ও মেয়েশিশুর মতো পুরুষ, ছেলেশিশু, হিজড়াসহ যে কোনো লিঙ্গের ব্যক্তির অসম্মতিতে নিপীড়নকে ধর্ষণ বলে গণ্য করতে বলা হয়েছে। ধর্ষণ মামলায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ধর্ষণের সংজ্ঞা পরিবর্তন, ভুক্তভোগীর চরিত্রগত সাক্ষ্যের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা, ভুক্তভোগীর জন্য রাষ্ট্র পরিচালিত ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠনসহ ১০টি সুপারিশ করা হয়। দেশের দণ্ডবিধি থেকে ধর্ষণের সংজ্ঞা নেওয়া হয়েছে। সময় বদলেছে, অনেক কিছুতেই পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। দেশের প্রতিটি শিক্ষাস্তরে সব ধর্মের শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষা অতি গুরুত্বের সঙ্গে পাঠদান করাতে হবে। তবেই আইন সংস্কার আলোর মুখ দেখবে। 

প্যানেল

×