
ছবি: জনকণ্ঠ
পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে অবহেলায় পড়ে থাকা ৫টি বেইলি ব্রিজ যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। উপজেলার পাড়েরহাট চালনা ব্রিজ থেকে শুরু করে চন্ডিপুরের মালবাড়ি খালে বিধ্বস্ত হওয়া ব্রিজটি পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে বিভিন্ন খালের উপরে রয়েছে এই ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজ। কলারন-সন্ন্যাসী-মোড়েলগঞ্জ-পিরোজপুর আঞ্চলিক সড়কের এই ব্রিজগুলোর ওপর নির্ভর করেই প্রতিদিন শত শত যানবাহন ও হাজারো মানুষ যাতায়াত করছে। সম্প্রতি উপজেলার চন্ডিপুরের মালবাড়ি খালের ওপর নির্মিত একটি বেইলি ব্রিজ ভেঙে পড়ার ঘটনায় ভয়াবহ বিপদের মুখে পড়েছে এলাকাবাসী। বন্ধ হয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির যান চলাচল।
গত ১৯ জুন রাতে কয়লা বোঝাই একটি ট্রাক মালবাড়ি ব্রিজ পার হওয়ার সময় ভার সইতে না পেরে ব্রিজটি খালে পড়ে যায়। ফলে ইন্দুরকানীসহ আশপাশের অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের জেলা শহর ও অন্যান্য এলাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকায় সাধারণ যাত্রী, পণ্যবাহী যানবাহন, এমনকি সুন্দরবনগামী মৎস্য ও বনজীবীরাও পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বাকি চারটি বেইলি ব্রিজের অবস্থাও ভয়াবহ। কোথাও মরিচায় ক্ষয় হয়ে পাতলা হয়ে গেছে স্টিলের পাত, কোথাও পাটাতন দেবে গেছে। অনেক স্থানে ভাঙা অংশ জোড়াতালি দিয়ে সাময়িক ব্যবহারযোগ্য করা হলেও তা যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
চন্ডিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মঞ্জু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "দীর্ঘদিন ধরেই এসব ব্রিজ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। হাজার হাজার যাত্রী ও কৃষিপণ্যবাহী ট্রাক এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। এখনই স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ না নিলে বড় ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা অনিবার্য হয়ে উঠবে।"
চন্ডিপুর থেকে এই পথে নিয়মিত মোটরসাইকেল যোগে যাতায়াত করেন ব্যবসায়ী আল মামুন বলেন, "বর্ষায় ব্রিজে একটু ব্রেক করলেই চাকা পিছলে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এমনকি ব্রিজের পাটাতনের ফাঁকা অংশেও চাকা আটকে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে প্রায়শই।"
বলেশ্বর পরিবহনের চালক বাচ্চু মিয়া জানান, "ভারি ট্রাক ব্রিজের ওপর উঠলেই দুলতে শুরু করে। যাত্রীরা আতঙ্কে পড়ে যান। কখন যে দুর্ঘটনা ঘটে বলা যায় না। এছাড়া দুটি বাস বা ট্রাক একসাথে ব্রিজ পার হতে পারে না—এক গাড়িকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, অন্যটি পার না হওয়া পর্যন্ত।"
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিরোজপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী টি.এম রাজিমুল আলীম রাজু জানান, “ব্রিজগুলোর প্রকৃত অবস্থা আমরা জানি। নতুন স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন দপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বাজেট অনুমোদন পেলে কাজ শুরু হবে। মালবাড়ি ব্রিজের সংস্কার কাজ শেষ হতে অন্তত ৭-৮ দিন সময় লাগবে।”
ইন্দুরকানীর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী বলেন, পাঁচটি ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজ অপসারণ করে দ্রুত নতুন স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণের জোর দাবি জানাচ্ছি। নতুবা শুধু জানমালের ক্ষতি নয়, ইন্দুরকানী উপজেলার সঙ্গে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগও চরমভাবে ব্যাহত হবে।
সাব্বির