ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

রোবট যুদ্ধের প্রস্তুতিতে চীন, আধিপত্যের দ্বারপ্রান্তে হিউম্যানয়েড বিপ্লব!

প্রকাশিত: ১৫:৩০, ২৫ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৫:৩০, ২৫ জুন ২০২৫

রোবট যুদ্ধের প্রস্তুতিতে চীন, আধিপত্যের দ্বারপ্রান্তে হিউম্যানয়েড বিপ্লব!

ছবি: সংগৃহীত

বিজ্ঞানের কল্পকাহিনিকে বাস্তবে রূপ দিতে চলেছে চীন। হিউম্যানয়েড রোবট তৈরিতে চীন শুধু এগিয়েই নয়, বরং নেতৃত্বের অবস্থান নিতে প্রস্তুত। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা আর ভূরাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার মিশেলে এই দৌড় এখন আর নিছক বৈজ্ঞানিক নয়এ এক ভবিষ্যৎ আধিপত্যের লড়াই।

রোবটিক দুনিয়ায় চীনের নেতৃত্বের স্পষ্ট সংকেত

একসময় যেসব রোবটের দেখা মিলত কেবল সিনেমায়, সেগুলোই আজ বাস্তবে চীনের দোকান, হাসপাতাল আর শহরে কাজ করছে। চীন ২০২৫ সালের মধ্যেই প্রতি বছর ১০ হাজারের এর বেশি হিউম্যানয়েড রোবট তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে। দেশটির এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা শুধু প্রযুক্তিকে নয়, পুরো বিশ্ব অর্থনীতিকেই প্রভাবিত করতে পারে।

জনসংখ্যা সমস্যার সমাধানে রোবট

চীন এখন একটি গুরুতর জনমিতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিএকদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে শ্রমবাজারে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এই সমস্যার সমাধানে রোবটকে সামনে আনছে দেশটি। হিউম্যানয়েড রোবট শুধু শিল্প কারখানায় নয়, বরং স্বাস্থ্যসেবা, বয়স্কদের সেবাদান এবং স্মার্ট শহর ব্যবস্থাপনায়ও ব্যবহৃত হবে।

চীনা সরকার এই খাতে বিশাল বিনিয়োগ করছেসরকারি ভর্তুকি, বিশেষ ঋণ সুবিধা এবং উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিশেষ প্রণোদনা চালু রয়েছে। শেনজেন শহর, যাকে বলা হয় ‘চীনের সিলিকন ভ্যালি’, এখানেই জন্ম নিচ্ছে নানা ধরনের রোবটিক উদ্ভাবন।

রোবটিক দৌড়ে ভূরাজনৈতিক শক্তির খেলা

এই রোবট যুদ্ধ শুধুই প্রযুক্তির নয়এটি এখন এক ভূরাজনৈতিক কৌশল। চীন চাইছে রোবটিক্সের মাধ্যমে পশ্চিমা প্রযুক্তিগত আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করতে। মার্কিন প্রতিষ্ঠান বোস্টন ডায়নামিকস এবং টেসলার ‘অপটিমাস প্রজেক্ট’ এই দৌড়ে প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও, চীনের রাষ্ট্র-সহায়ক কৌশল এবং বৃহৎ বিনিয়োগ তাদের এগিয়ে রাখছে।

Citigroup-এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, আগামী কয়েক দশকে হিউম্যানয়েড রোবট বাজারের আকার দাঁড়াবে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারে। এই বাজার দখলের দৌড়ে চীন এখন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী।

চীনের সংখ্যাগত শক্তি ও দ্রুত উদ্ভাবন

চীনে বর্তমানে প্রতি ১০ হাজার শ্রমিকে প্রায় ৩২২টি শিল্প রোবট কাজ করছেযা জাপান বা দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে তুলনীয়। দেশটির ৫০০-র বেশি কোম্পানি হিউম্যানয়েড রোবট এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করছে। আর পশ্চিমা দেশ যেখানে রোবটিক্স নিয়ে কিছুটা ধীরগতির অবস্থানে, চীন সেখানে দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে।

চীনের এই অগ্রযাত্রা শুধু তাদের অর্থনীতিকে নয়, বৈশ্বিক মানবজীবনের ধরণকেও পাল্টে দিতে পারে। যদি এই গতি বজায় থাকে, তাহলে কাজের ধরন, সেবাখাত এবং দৈনন্দিন জীবনের বহু অংশে রোবট হয়ে উঠবে অনিবার্য সঙ্গী।

ভবিষ্যতের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে?

এই রোবটিক দৌড়ের শেষ কোথায়, তা এখনই বলা কঠিন। তবে এতটুকু নিশ্চিতচীনের এই নিরন্তর উদ্ভাবন ও রাষ্ট্রীয় সহায়তা ভবিষ্যতের প্রযুক্তি ও মানবিক জীবনের চেহারা পাল্টে দিতে পারে। রোবট এখন আর কল্পনা নয়, বরং এক নতুন বাস্তবতাযেখানে নেতৃত্ব দখলের লড়াই ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।

 

সূত্র: https://3dvf.com/en/china-ready-to-dominate-the-humanoid-robot-wars/

রাকিব

আরো পড়ুন  

×