ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

আপনার অ্যান্ড্রয়েডেই লুকিয়ে আছে ভাইরাস! দেখুন এই ৭টি ভয়ঙ্কর লক্ষণ

প্রকাশিত: ১৭:০৩, ২৫ জুন ২০২৫

আপনার অ্যান্ড্রয়েডেই লুকিয়ে আছে ভাইরাস! দেখুন এই ৭টি ভয়ঙ্কর লক্ষণ

ছবি: সংগৃহীত

ম্যালওয়্যার হলো যেকোনো এন্টারপ্রাইজ ডিভাইসের জন্য একটি বড় হুমকি, আর মোবাইল অ্যাডমিনদের উচিত অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে এই ধরনের হুমকি শনাক্ত ও নির্মূল করার কৌশল জানা।

মোবাইল ডিভাইস অনেক সময় এন্টারপ্রাইজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকির ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়ায়, এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ কখনোই এই ঝুঁকি উপেক্ষা করা উচিত নয়। মোবাইল ম্যালওয়্যার সংবেদনশীল ব্যক্তিগত ও কর্পোরেট ডেটা চুরি, সিস্টেম অকার্যকর করে ফেলা বা হার্ডওয়্যারে ক্ষতি সাধনের মাধ্যমে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। এসব বিপদ এড়াতে প্রতিষ্ঠানগুলোর এই ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে জানা এবং উপযুক্ত প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।

অ্যান্ড্রয়েড কতটা নিরাপদ?

অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম নিজে থেকে ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তবে কিছু কারণে এটি ম্যালওয়্যারের জন্য সংবেদনশীল। প্রথমত, অ্যান্ড্রয়েড একটি ওপেন সোর্স প্ল্যাটফর্ম, অর্থাৎ যেকোনো ডেভেলপার এর কোডে প্রবেশ করে অ্যাপ তৈরি করতে পারে—মাঝেমধ্যে তা হতে পারে ক্ষতিকর। দ্বিতীয়ত, অ্যান্ড্রয়েডের বৈশ্বিক বাজারে বিশাল অংশীদারিত্ব থাকায় এটি হ্যাকারদের প্রধান টার্গেট।

আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো—অ্যান্ড্রয়েড ইকোসিস্টেমে অনেক নির্মাতা ও ক্যারিয়ার জড়িত থাকে, যারা সফটওয়্যার আপডেট মুক্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলে অনেক ডিভাইসে পুরনো ও অনাপডেটেড অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন চালু থাকে, যা ম্যালওয়্যারের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করে।

অ্যান্ড্রয়েডে সাধারণ দুর্বলতা ও ম্যালওয়্যারের ধরন

ম্যালওয়্যার যেকোনো পথেই স্মার্টফোনে প্রবেশ করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে হ্যাকাররা অ্যান্ড্রয়েড-নির্দিষ্ট দুর্বলতাকে কাজে লাগায়। এর মধ্যে রয়েছে:

  • আনপ্যাচড ডিভাইস: অ্যান্ড্রয়েডে নিয়মিত সিকিউরিটি প্যাচ আসে, কিন্তু অনেকে সেগুলো ইনস্টল না করায় হ্যাকাররা পুরনো দুর্বলতাগুলো কাজে লাগায়।

  • সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং: ব্যবহারকারীকে ধোঁকা দিয়ে ডিভাইসে প্রবেশের চেষ্টা করা হয়। যেমন—এসএমএস ফিশিং বা ‘স্মিশিং’, যেখানে টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে ম্যালওয়্যার ছড়ানো হয়।

  • তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ ইন্সটল: গুগল প্লে স্টোর ছাড়া অন্য উৎস থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করলে ম্যালওয়্যারের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

  • অতিরিক্ত অনুমতি: কিছু অ্যাপ অপ্রয়োজনীয় পারমিশন চায়, যা পরে ব্যবহারকারীর ডেটা বা ডিভাইস ফিচার অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি করে।

অ্যান্ড্রয়েডে সাধারণ ম্যালওয়্যারের ধরন:

  • স্পাইওয়্যার: ব্যবহারকারীর কার্যকলাপ নজরে রাখে ও গোপন তথ্য সংগ্রহ করে।

  • অ্যাডওয়্যার: অনাকাঙ্ক্ষিত বিজ্ঞাপন দেখিয়ে ডিভাইসের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলে এবং মাঝে মাঝে ক্ষতিকর লিঙ্কে রিডাইরেক্ট করে।

  • ট্রোজান: নিরীহ অ্যাপ হিসেবে ছদ্মবেশ ধারণ করে, কিন্তু ভেতরে ক্ষতিকর কোড থাকে। ইনস্টল হওয়ার পর তথ্য চুরি বা রিমোট অ্যাক্সেস দিতে পারে।

  • র‍্যানসমওয়্যার: ডিভাইস বা ফাইল লক করে ফেলে এবং মুক্তিপণের দাবি করে।

অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের সুরক্ষায় গুগলের পদক্ষেপ

গুগল কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • মাসিক নিরাপত্তা আপডেট

  • গুগল প্লে প্রটেক্ট, যা অ্যাপ ইনস্টল করার আগে ও পরে ম্যালওয়্যার স্ক্যান করে

  • Android Enterprise Recommended প্রোগ্রাম, যা নির্ধারিত সিকিউরিটি ও ম্যানেজমেন্ট ফিচারসহ ডিভাইস নির্বাচনে সহায়তা করে

  • Google Safe Browsing, যা ব্যবহারকারীকে ক্ষতিকর ওয়েবসাইট সম্পর্কে আগেই সতর্ক করে

অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে ম্যালওয়্যারের ৭টি লক্ষণ

  • অস্বাভাবিক ডেটা ব্যবহার: ম্যালওয়্যার ব্যাকগ্রাউন্ডে ডেটা ব্যবহার করে।

  • হঠাৎ ব্যাটারি খরচ বেড়ে যাওয়া: ম্যালওয়্যার প্রসেস অনেক ব্যাটারি ব্যবহার করে।

  • অচেনা বিজ্ঞাপন ও পপ-আপ: অ্যাডওয়্যার অ্যাক্টিভ হলে এই সমস্যাগুলো দেখা যায়।

  • অজানা অ্যাপ ইনস্টল: নিজের অজান্তে অ্যাপ ইনস্টল হয়ে থাকলে তা ম্যালওয়্যার হতে পারে।

  • পারফরম্যান্স কমে যাওয়া: প্রসেসর ও RAM দখল করে ডিভাইস স্লো হয়ে যায়।

  • র‍্যানসমওয়্যার নোটিস: স্ক্রিনে হঠাৎ করে র‍্যানসম দাবি দেখালে এটি ম্যালওয়্যারের নিশ্চিত লক্ষণ।

  • সিস্টেম অস্বাভাবিকতা: অচেনা মেসেজ সেন্ড হওয়া বা কল হিস্টোরিতে অপরিচিত নাম্বার দেখা গেলে সতর্ক হতে হবে।

অ্যান্ড্রয়েড থেকে ম্যালওয়্যার শনাক্ত ও সরানোর উপায়

  • মোবাইল থ্রেট ডিটেকশন টুল ব্যবহার করুন:

    যেমন—অ্যান্টিভাইরাস, রিয়েল-টাইম স্ক্যানার ও এন্ডপয়েন্ট ডিটেকশন সফটওয়্যার।

  • এমডিএম (MDM) পলিসি প্রয়োগ করুন:

    কর্পোরেট ডিভাইসে অবৈধ অ্যাপ শনাক্ত ও রিমুভ করতে MDM কার্যকর।

  • সেইফ মোডে রিস্টার্ট করুন:

    থার্ড-পার্টি অ্যাপ নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। তখন সন্দেহভাজন অ্যাপগুলো সহজেই শনাক্ত ও ডিলিট করা যাবে।

  • ডাউনলোড ও ক্যাশ ফাইল ক্লিয়ার করুন:

    ম্যালওয়্যার পুনরায় ইনস্টল হওয়ার ঝুঁকি কমাতে এটি প্রয়োজন।

  • ফ্যাক্টরি রিসেট করুন (শেষ বিকল্প হিসেবে):

    এটি সমস্ত কনটেন্ট ও সেটিংস মুছে ফেলবে, তবে অধিকাংশ ম্যালওয়্যার দূর হবে।

আবির

আরো পড়ুন  

×