ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

বিদেশে এস আলমের নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০১:৩১, ২৫ জুন ২০২৫

বিদেশে এস আলমের নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ

বিদেশে এস আলমের নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ

ব্যাংক খাতে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের সাইপ্রাসে থাকা দোতলা বাড়ি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া তিনি ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের নামে ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জে থাকা ১৯ কোম্পানির শেয়ার ও যুক্তরাজ্যের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল জার্সিতে থাকা ছয়টি ট্রাস্ট কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার দুদকের পৃথক তিন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দেন। এদিকে এস আলমকে ভুয়া ঋণ দেওয়ার অভিযোগে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ১০ কর্মকর্তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এদিন দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম।
তিনি জানান, দুদকের উপপরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হক এস আলম নামে পরিচিত সাইফুল আলমের সাইপ্রাসের বাড়ি জব্দ এবং বিদেশের কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এস আলমসহ দেশের বড় কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ‘অবৈধ সম্পদ অর্জন ও দুর্নীতির’ অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
এস আলমের বিরুদ্ধে ব্যাংক হতে নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ পাচার, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছে দুদক। ১৭ জুন এস আলম ও তার স্বার্থ সংশ্লি­ষ্টদের নামে থাকা ১৮০ কোটি ৬১ লাখ টাকা মূল্যের ২০০ একর জমি জব্দের আদেশ দেয় আদালত। তার আগে ২৩ এপ্রিল সাইফুল আলম এবং তার স্বার্থ সংশ্লি­ষ্টদের নামে ঢাকা ও চট্টগ্রামে থাকা ৪০৭ কোটি টাকার ১৫৯ দশমিক ১৫ একর জমি জব্দের আদেশ দেন একই আদালত।
১৭ এপ্রিল এস আলম গ্রুপের কর্ণধার ও তার স্বার্থ সংশ্লি­ষ্টদের নামে থাকা এক হাজার ৩৬০টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়। এসব হিসাবে দুই হাজার ৬১৯ কোটি সাত লাখ ১৬ হাজার টাকা রয়েছে। তার আগে গত বছরের ৭ অক্টোবর এস আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ তার পরিবারের ১২ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। ১৬ জানুয়ারি এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ৩ হাজার ৫৬৩ কোটি ৮৪ লাখ ২১ হাজার টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন একই আদালত।
৩ ফেব্রুয়ারি ৩৬৮ কোটি ২৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ১৭৫ বিঘা সম্পদ জব্দের আদেশ দেওয়া হয়।
১২ ফেব্রুয়ারি ৪৩৭ কোটি ৮৫ লাখ ২ হাজার ২৭৪টি শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেয় আদালত। এসব শেয়ারের মূল্য ৫ হাজার ১০৯ কোটি টাকা। ২৩ ফেব্রুয়ারি তাদের আট হাজার ১৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা মূল্যের শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়।
১০ মার্চ এস আলমের এক হাজার ছয় বিঘা জমি জব্দের আদেশ দেয় আদালত। তারপর ৯ এপ্রিল তার ৯০ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দেওয়া হয়। একইদিন আদালত তার ঘনিষ্ঠজনদের নামে থাকা ৩৭৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়।
ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ১০ কর্মকর্তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ॥ এস আলম গ্রুপের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঋণ দিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন থাকায় ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ১০ কর্মকর্তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন। 
নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হচ্ছেন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সাবেক ডিএমডি মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ইহসানুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আহ্বায়ক মুহাম্মদ কায়সার আলী, সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক শাখা প্রধান মুহাম্মদ সিরাজুল কবির, রংপুর জোনের সাবেক সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসভিপি) মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদ, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ জুবায়েরুল হক, সাবেক কর্মকর্তা এস এম তানভির হাসান ও হোসেন মোহাম্মদ ফয়সাল। 
এদিন তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন দুদকের উপ-পরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হক। আবেদনে বলা হয়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য টিম গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ অনুসন্ধানকালে জানা যায়, এস আলমের স্বার্থ সংশ্লি­ষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নিয়মবহির্ভূতভাবে ঋণ দিতে সহায়তা করা ইসলামী ব্যাংকের অভিযুক্ত কর্মকর্তারা দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন। তারা বিদেশে চলে গেলে অনুসন্ধান কাজ ব্যাহত হতে পারে। এ জন্য অনুসন্ধান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত আবশ্যক। 
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলায় মনিরুল মাওলাকে সোমবার কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন একই আদালত।

×