ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

‘ইরান নয়, বিশ্ব ঝুঁকিতে’: যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলি আগ্রাসনে সংকেত পেল বাকি বিশ্ব

মো. সোহাগ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঢাকা:

প্রকাশিত: ২০:২২, ২৪ জুন ২০২৫; আপডেট: ২০:২৫, ২৪ জুন ২০২৫

‘ইরান নয়, বিশ্ব ঝুঁকিতে’: যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলি আগ্রাসনে সংকেত পেল বাকি বিশ্ব

মধ্যপ্রাচ্যে ইরানকে লক্ষ্য করে সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলি হামলার কঠোর সমালোচনা করেছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা। তাঁদের মতে, এই হামলা কেবল একটি নিরাপত্তাহীন যুদ্ধাবস্থার সূচনা নয়, বরং বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তারের দিকেও ঠেলে দিতে পারে বিশ্বকে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক কুইন্সি ইনস্টিটিউট ফর রেসপন্সিবল স্টেটক্রাফট-এর নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্রাইটা পারসি বলেছেন, “ইরান যে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পথে এগোচ্ছিল, তার কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নেই। আর ইসরায়েলের অস্তিত্বও এতে হুমকির মুখে ছিল না।” আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পারসি বলেন, “বাস্তবতা হলো—এখানে দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ একটি অস্ত্রবিহীন দেশের ওপর হামলা চালিয়েছে, অথচ তারা নিজেরা কোনো আগ্রাসনের শিকার হয়নি। যুদ্ধ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলই।”

এই বিশ্লেষকের মতে, ইরানকে লক্ষ্য করে এই হামলা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি ভয়ানক সংকেত দেবে। তিনি বলেন, “যেসব দেশ নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছে, তারা মনে করবে—যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মতো পরাশক্তির হামলা ঠেকাতে হলে নিজস্ব পারমাণবিক প্রতিরক্ষা গড়াই একমাত্র উপায়।” তিনি আরও আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “আমার মনে হয়, এই হামলা আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে ইরানকে একটি পারমাণবিক রাষ্ট্রে পরিণত করবে।”

এই ইনস্টিটিউটের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক উপ-পরিচালক অ্যাডাম ওয়াইনস্টিন বলেন, “এই পরিস্থিতি মূলত সংঘাতের চক্র শুরু করে দিয়েছে। এখন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে।” তিনি সতর্ক করে বলেন, ইরান এখন পারমাণবিক কর্মসূচি আরও গোপনে চালিয়ে যেতে পারে এবং এনপিটি (পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি) থেকেও সরে আসতে পারে।

“যদি ইরান এনপিটি ছাড়ে, তাহলে ইসরায়েল বলবে—দেখুন, আমাদের আরেক দফা হামলা চালানো দরকার। আর ইরানও তখন পাল্টা জবাব দিতে বাধ্য হবে। নইলে সরকারের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। একবার সংঘাত শুরু হলে তা আর সহজে থামে না,” বলেন ওয়াইনস্টিন।

বিশ্লেষকদের মতে, এই যুদ্ধ আসলে একটি 'ঐচ্ছিক সংঘর্ষ' হলেও এর ফলাফল অনিবার্য—উত্তেজনা বাড়বে, পারমাণবিক প্রতিযোগিতা তীব্র হবে এবং বিশ্ব নিরাপত্তা আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠবে।

আফরোজা

×