ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী বিনোদনপুর ইউনিয়নের ৭৬ বিঘি থেকে জমিনপুর পর্যন্ত রাস্তাটি আজও চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে আছে। গ্রামীণ জনজীবনের প্রাণসঞ্চারী এই রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকলেও কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এই এলাকার মানুষ বলেন, তাদের কষ্টের কথা আজও কেউ শুনতে আসেনি, এমনকি কোনো সাংবাদিকও নয়।
আমার গবেষণার তথ্য সংগ্রহে জমিনপুর সীমান্ত অঞ্চলে গিয়ে সরেজমিনে দেখে এলাম, বর্ষার পানিতে রাস্তার অধিকাংশ অংশই তলিয়ে গেছে। কাদায় পা ডোবানো ছাড়া চলাচলের বিকল্প কোনো পথ নেই। এলাকার একজন বয়স্ক মানুষ আফসোস করে বললেন, "আমাদের প্রাণের দাবি একটা ভালো রাস্তা।" কথায় কথায় তিনি গ্রামের অন্য মানুষেরাও কষ্টের কথা জানান, বলেন, "এই রাস্তায় কেউ নজর দেয় না। রাস্তা তো দূরের কথা, আমরা অনেক মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত।"
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, একসময় গ্রাম থেকে তেলকুপি বিওপি পর্যন্ত একটি পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু সংস্কারের অভাবে সেটিও এখন প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।
আরও ভয়াবহ চিত্র দেখা যায় স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে। গ্রামের মানুষ জানান, ছোট খাটো চিকিৎসার জন্যও তাদের ৬-৭ কিলোমিটার দূরে চলাচলের অযোগ্য রাস্তা পেরিয়ে খেশেরহাট যেতে হয়। অথচ এই দুর্বল, কাদাযুক্ত রাস্তা পেরিয়ে গুরুতর রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছানো একপ্রকার অসম্ভব। যাতায়াতের এই ভোগান্তির কারণে অনেক সময় রোগীদের বাড়িতেই বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করতে হয়।
শিক্ষাক্ষেত্রেও রয়েছে চরম সমস্যা। এলাকার একমাত্র উচ্চবিদ্যালয় বিনোদপুর উচ্চবিদ্যালয়, যা জমিনপুর সীমান্ত অঞ্চল থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে। শুকনো মৌসুমে ছেলেমেয়েরা কষ্ট করে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যায়, কিন্তু বর্ষাকালে স্কুলে যাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আশঙ্কাজনক হারে কমে যায়।
এই চিত্র কেবল ৭৬ বিঘি থেকে জমিনপুর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। এটি বাংলাদেশের বহু প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাস্তবতা। অথচ গ্রামীণ জনপদের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে একটি ভালো রাস্তার গুরুত্ব অপরিসীম। এই অবহেলিত জনপদের মানুষ আজও চেয়ে আছে: কবে তারা পাবে একটি চলাচলের উপযোগী রাস্তা।
নোভা
