ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

ভয়ঙ্কর অস্ত্রেও ধ্বংস হয়নি ইরানের পরমাণু প্রকল্প! মানছেন না ট্রাম্প

প্রকাশিত: ১৫:৫৬, ২৫ জুন ২০২৫

ভয়ঙ্কর অস্ত্রেও ধ্বংস হয়নি ইরানের পরমাণু প্রকল্প! মানছেন না ট্রাম্প

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি - ডিআইএ)। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান, এ বুধবার (২৫ জুন) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে পেন্টাগনের গোপন বিশ্লেষণের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা স্থায়ী নয়, সর্বোচ্চ ৬ থেকে ৯ মাসের জন্য কার্যক্রম বিলম্বিত হতে পারে।

 

প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমার মাধ্যমে ইরানের তিনটি প্রধান পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায়। লক্ষ্যবস্তু ছিল, নাতানজ, ফোরদো ও ইসফাহান কেন্দ্র। হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, “ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়েছে।” কিন্তু পেন্টাগনের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন সে দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে।

 

ডিআইএ’র মূল্যায়নে বলা হয়েছে, মাটির নিচে থাকা গবেষণাগার ও সেন্ট্রিফিউজ ইউনিটগুলো আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সেগুলোর অধিকাংশই পুনরায় সচল করার মতো অবস্থায় রয়েছে। হামলার আগে ইরান তাদের ইউরেনিয়ামের সিংহভাগ নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করায়, স্থায়ী ক্ষতির সম্ভাবনা অনেকটাই কমে গেছে। ফলে এই হামলা ইরানের প্রকল্পকে সাময়িকভাবে বিলম্বিত করলেও, দীর্ঘমেয়াদে কার্যত কোনো মৌলিক বিপর্যয় ঘটেনি।

এ নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ মহলেও মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের প্রধান জেনারেল ড্যান কেইন জানান, “তিনটি স্থাপনাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে এগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে এমন বলা সম্ভব নয়। চূড়ান্ত মূল্যায়ন এখনো শেষ হয়নি।”

অন্যদিকে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলছেন, “আমাদের হামলা ছিল সম্পূর্ণ সফল, স্থাপনাগুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে।”

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স স্বীকার করেছেন, “আমরা নিশ্চিত নই, বর্তমানে ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম কোথায় সংরক্ষিত রয়েছে। আগামী সপ্তাহগুলোতে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”

 

 

আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-র মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রসি উদ্বেগ জানিয়ে বলেছেন, “আমরা প্রায় ৪০০ কেজি ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের কোনো নির্ভরযোগ্য হিসাব রাখতে পারছি না।”

ডিআইএ’র প্রতিবেদন ফাঁসের পর হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট এক বিবৃতিতে বলেন, “এই তথাকথিত প্রতিবেদন ফাঁস করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং আমাদের সাহসী পাইলটদের সুনাম ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা চলছে।”

যদিও হোয়াইট হাউস আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি, কংগ্রেসে প্রতিবেদনটি নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বিশেষত ডেমোক্র্যাট সিনেটররা প্রশ্ন তুলেছেন, “যদি কোটি কোটি ডলারের সামরিক অভিযানের পর কেবল সময়ই কেনা যায়, তবে এটি সামরিক কৌশলের একটি ব্যর্থতা।”

 

 

হামলার পর ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “আমরা ভীত নই। যত দ্রুত সম্ভব আমরা পারমাণবিক কর্মসূচি পুনরায় চালু করব।” ইরানি কর্মকর্তারা এই হামলাকে ‘রাজনৈতিক শো’ হিসেবেও অভিহিত করেছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা মূলত কৌশলগত নয়, বরং কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের অংশ। ইরান চাইলে কয়েক মাসের মধ্যেই পূর্বের সক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে পারবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
 

ছামিয়া

×