
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে যাতায়াতে ভরসা রেখেছেন জরাজীর্ণ, লক্করঝক্কর আর রংচটা বাসের ওপর। আধুনিক শিক্ষার আলো নিয়ে স্বপ্ন দেখাতে আসা এই শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত পরিবহনের অভাব যেন এক স্থায়ী সমস্যায় পরিণত হয়েছে। প্রশাসন আসে, প্রশাসন যায়—নতুন বাসের স্বপ্ন যেন স্বপ্নই রয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাসগুলো দীর্ঘদিনের পুরনো। এর মধ্যে দুটি বাস পুরোই বিকল, দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে। বর্তমানে ৫টি বাস নিয়মিত চলে। অনেক বাসে নেই ঠিকঠাক দরজা, জানালার কাঁচ ভাঙা, সিট ছেঁড়া, ফ্যান নষ্ট, আর ইঞ্জিনের শব্দে কানে তালা লাগার উপক্রম। জায়গার অভাবে দাঁড়িয়ে যেতে হয়। এতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি বহুগুণে বেড়ে গেছে।
শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
শিক্ষার্থীরা জানান, বাস কম থাকায় আমরা আমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে ১৫–২০ মিনিট আগেই আসি সিট ধরার জন্য, যাতে শহরে গিয়ে কিংবা শহর থেকে এসে ক্লাস করতে পারি। তারা বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন যেন বাসের গায়ে লেগে থাকা জংয়ের মতোই ক্ষয়ে যেতে বসেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দ্রুত উদ্যোগ ছাড়া শিক্ষার্থীদের এই দুর্ভোগ লাঘব সম্ভব নয়। উন্নত ও নিরাপদ পরিবহন শিক্ষার মৌলিক সহায়ক, যা অগ্রাহ্য করার কোনো সুযোগ নেই।
পর্যাপ্ত বাসের অভাব
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। হাজারো শিক্ষার্থীর জন্য চালু আছে হাতে গোনা কয়েকটি বাস, যা কোনোভাবেই চাহিদা পূরণ করতে পারে না। এতে করে অনেক শিক্ষার্থীকে ঠেলাঠেলি করে কিংবা ঝুলে ঝুলে যাতায়াত করতে হয়, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। জুলাইয়ের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নতুন বাসের আশ্বাস দিলেও ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো নতুন বাস পায়নি শিক্ষার্থীরা। বাস মেরামত ও নতুন বাস সংগ্রহের জন্য তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না বলেও অনেকে জানিয়েছেন। তবে পরিবহন পুলের ফেসবুক গ্রুপে কয়েকদিনের মধ্যে বাসগুলো সংস্কার করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এমনি বাস সংকট, তার মধ্যে একটি বাস চুরি হয়েছে। সেটারও তদন্ত কমিটি গঠন হলেও রিপোর্ট ৮ মাসেও প্রকাশ হয়নি।
শিক্ষার্থীদের বক্তব্য
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সবুর খন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস এখন আর বাস নেই—এটি সাধারণ গণপরিবহনের চেয়েও অনেক খারাপ। শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে যাওয়ার জায়গাটুকুও পায় না। নারী শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ঝুলে ঝুলে যাতায়াত করতে হয়—এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লজ্জাজনক। তবুও প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই। এভাবেই যদি চলতে থাকে, তাহলে বলব—বাস বন্ধ করে দিয়ে টাকা সেভ করুক, অন্তত শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কিছুটা কমবে।”
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল আসিফ আকন্দ বলেন, “বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ১৭ বছরে পদার্পণ করেছে। কিন্তু দেড় যুগ পরেও যাতায়াত সমস্যার সমাধান হয়নি। শিক্ষার্থীর তুলনায় বাস সংখ্যা নগণ্য। ফলে যাতায়াতের সময় অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাসগুলোর ফিটনেস নেই, রং উঠে গেছে, চালানোর অনুপযোগী। এসব বাসে চলাচল করা অস্বস্তিকর ও বিপদজনক। রংপুরের বাইরে যাওয়ার উপযোগিতাও নেই। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি—বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং রংসহ যাবতীয় ত্রুটি-বিচ্যুতি দ্রুত মেরামতের দাবি জানাচ্ছি। আশা করি প্রশাসন নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করে পথ সুগম করবে।”
পরিবহন পুলের পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক মো. মাসুদ রানা বলেন, “বাসগুলোর সংস্কার, রং করার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুই একদিনের মধ্যে রং করা হবে। নতুন বাস সংযুক্তির জন্য ইউজিসি বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে।”
সানজানা