
ছবি: সংগৃহীত
জীবনের তুলনা ফুলের সঙ্গে এমনি এমনি করা হয় না। ফুলের মতোই জীবন বিকশিত হয়, মানুষ তার কৃতিত্বে অন্যদের মুগ্ধ করে, এক সময়ে ফুলের মতোই ঝরে যেতে হয় জীবনের বৃন্ত থেকে। যে মানুষ জীবনে অনেকটা সময় কাটিয়ে বার্ধক্যে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে, তার জন্য শোকের ভার কম হয় স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু যাঁরা অকালে চলে যান, তাঁদের ভোলা কঠিন হয়ে পড়ে।
দক্ষিণী ছবির জগতে মণীষা উন্নির মৃত্যু ঠিক সেই রকমই এক ঘটনা। মাত্র ২১ বছর বয়সে দুর্ঘটনায় তাঁর অকালপ্রয়াণ এখনও যেন ইন্ডাস্ট্রির এক অপূরণীয় ক্ষতি।
অভিনেত্রী মণীষা উনি খুব অল্প বয়সেই দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা জগত জয় করেছিলেন। কেরলের কোঝিকোড়ে শ্রীদেবী উনি এবং নারায়ণ উনের সংসারে জন্ম হয়েছিল মণীষার। মা মোহিনীঅট্টম নৃত্যকলার বিখ্যাত শিল্পী, বেশ কিছু ছবিতে অভিনয়ও করেছেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই মণীষা মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে নৃত্যের প্রতি আগ্রহ পেয়েছিলেন। তিনি ৫ বছর বয়সেই নৃত্যকলায় দক্ষতা অর্জন করেছিলেন।
অভিনয় জগতের প্রতি তাঁর টানও মা শ্রীদেবী উনের সূত্রেই। স্কুলে থাকাকালীন মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি ‘ভয়া’ নামের তামিল ভাষায় নির্মিত একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ছবির কাহিনীর লেখক ও পরিচালক এম. ডি. বাসুদেবন নায়ার মণীষার অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং তাঁকে নিজের পরের ছবিতে নেন।
সেই চলচ্চিত্রটি ছিল মলয়ালম ছবি ‘নখক্ষতাঙ্গল’, যা ১৯৮৬ সালে মুক্তি পায়। তখন মণীষার বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। এই ছবিতে তাঁর অসাধারণ অভিনয়ের জন্য তিনি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন।
১৬ বছর বয়সে প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবিতেই জাতীয় পুরস্কার জিতে তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন। এরপর একের পর এক ছবির প্রস্তাব আসতে থাকে। ৬ বছরের কেরিয়ারে তিনি ২৫টি ছবিতে অভিনয় করেন। তাঁর ছবিগুলো হিটও হয়। তামিল ভাষায় তিনি ‘পুক্কল ধুত ধুধু’ এবং ‘দ্রাবিড়ন’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন।
১৯৯২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘উন্না নেনাইচেন্নে পাত্তু পাদিচেন’ ছবির গান আজও লোকের মুখে মুখে ফেরে। এই ছবিতে তাঁর চরিত্রটি ছবির মাঝখানে মারা যায়। কে জানত বাস্তবেও সেই পরিণতি আসছে! মণীষার শেষ ছবি ছিল শরৎকুমারের ‘মুনরাবতী কান’। ৫ ডিসেম্বর ১৯৯২ তারিখে মণীষা ও তাঁর মা শ্রীদেবী একটি গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন।
সেই সময় উল্টো দিক থেকে আসা কেরল সরকারি বাসের ধাক্কায় মণীষার ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। তাঁর অকালপ্রয়াণ চলচ্চিত্র জগতে এক বিরাট ধাক্কা দেয়। আজও ভক্তরা তাঁর মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
শহীদ