
ভুল তথ্য ও নানা অসঙ্গতি ‘শ্রেষ্ঠ শিক্ষক’ নির্বাচন বাতিল
ভুল তথ্য, ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র ঠিক না থাকায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষক পুরস্কার বাতিল করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৩০০ কোটি টাকার প্রকল্পের নাম পারফরমেন্স বেজড গ্র্যান্টস ফর সেকেন্ডারি ইনস্টিটিউশনস (পিবিজিএসআই)।
প্রতিবছর উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও নারী শিক্ষককে জনপ্রতি লাখ টাকা দেওয়া হতো। কিন্তু শিক্ষক নির্বাচনে দীর্ঘদিন ধরেই অনিয়ম, ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল। তবে এ বছর শিক্ষার্থীদের মাঝে আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। ‘পিবিজিএসআই’ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি সরকারি অনুদান প্রোগ্রাম। এটি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) কর্তৃক পরিচালিত একটি প্রকল্প। এর উদ্দেশ্য মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং শিক্ষার মানোন্নয়ন করা।
অথচ সূত্র বলছে প্রতিবছর এই স্কিমের আওতায় দলীয় শিক্ষক, শিক্ষাকর্মকর্তাদের যোগসাজশ ও আর্থিক সুবিধা নিয়ে একাধিক চক্র শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচন করতেন। যা নিয়ে এই স্কিম সংশ্লিষ্টরাও কোনো তৎপরতা দেখাননি। উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও নির্বাচিত করে ৫ লাখ টাকা আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ঠাসা। যার ফলে হাজার কোটি টাকার স্কিম থেকে শিক্ষায় তেমন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
পিবিজিএসআই স্কিম সংশ্লিষ্টরা জানান, যেসব শিক্ষকের তথ্য উপজেলা-থানা পর্যায় থেকে পাঠানো হয়েছে, তাদের অসংখ্য তথ্য ভুল। কারও জন্ম তারিখ ঠিক নেই, কারও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্যসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্যে গরমিল। আবার কারও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ভুয়া। ভুল-ভুয়া তথ্য ও তথ্য ঘাটতির কারণে বাধ্য হয়ে এবার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
‘অগ্রগতি ও অপারগতা’ শীর্ষক এক চিঠিতে গত ২১ জুন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আজাদ খানকে এমন তথ্য জানিয়েছেন পিবিজিএসআই স্কিমের পরিচালক মো. তোফাজ্জল হোসেন। তবে এ স্কিমের আওতায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পুরস্কার পাচ্ছেন। আগামী ২৬ জুনের মধ্যে তাদের দেওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পুরস্কারের অর্থ পাঠানো হবে। তবে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচন বাতিল হওয়ায় আনুষ্ঠানিক কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে না।
মাউশির মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খান বলেন, ‘চিঠিটি পেয়েছি। এটা খুবই দুঃখজনক। ভুল তথ্য, ভুয়া তথ্যের এমন ছড়াছড়ি কাম্য নয়। শিক্ষকরা যদি এত ছলচাতুরীর আশ্রয় নেন, তাহলে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে? সমাজে কী বার্তা যাবে? কী কারণে এবং কাদের গাফলতিতে এটা ঘটেছে, তার কারণ বের করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পিবিজিএসআই’র চিঠির তথ্যমতে, স্কিমের আওতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় ব্যবস্থাপনা জবাবদিহি অনুদান, উপজেলা বা থানা শ্রেষ্ঠ শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী পুরস্কারের জন্য ৫২০টি উপজেলা-থানার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়েছিল। স্কিমের আওতায় পুরস্কার প্রদানের জন্য গত ১ জুন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। মাঠপর্যায় থেকে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই করে সংগ্রহের জন্য ১৫ জুন স্কিমের কর্মকর্তা সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্টসহ ৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী- ৫২০টি উপজেলা ও থানার মধ্যে ৩৯২টি উপজেলা ও থানার ১ হাজার ৯৬ জন শিক্ষকের তথ্য পাওয়া যায়। এরমধ্যে ৫৬২ জন শিক্ষকের সকল তথ্য পাওয়া গেছে। তবে শিক্ষক নির্বাচনের জন্য সব উপজেলা থেকে নির্বাচন কমিটির রেজ্যুলেশন ও যথাযথ প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এতে আরও বলা হয়, ‘কিছুসংখ্যক শিক্ষকের মোবাইল নম্বর ও এনআইডি নম্বর ডুপ্লিকেট (ভুয়া), কারও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর ভুল এবং আইবাস ডাবলপ্লাস সফটওয়্যার থেকে ভেরিফিকেশনের তালিকায় থাকা শিক্ষকের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও জন্মতারিখ ভুল পাওয়া গেছে। সেজন্য চলতি অর্থবছরে পুরস্কার প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু ২৬ জুনের মধ্যে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পুরস্কারের টাকা পাঠানো হবে ।