ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

কোনো ক্লিক ছাড়াই হ্যাক করে নিচ্ছে মোবাইল ফোন

প্রকাশিত: ১১:১০, ২৫ জুন ২০২৫

কোনো ক্লিক ছাড়াই হ্যাক করে নিচ্ছে মোবাইল ফোন

সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সম্প্রতি একটি অদ্ভুত ঘটনা লক্ষ্য করেন—কিছু নির্দিষ্ট স্মার্টফোন বারবার ক্র্যাশ করছে। এসব ফোনের ব্যবহারকারীদের পেশাগত পরিচয় ছিল গুরুত্বপূর্ণ: কেউ ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা, কেউ রাজনীতিবিদ, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বা সাংবাদিক।

২০২৪ সালের শেষ দিকে শুরু হওয়া এই ক্র্যাশগুলো ২০২৫ সালেও চলতে থাকে। এগুলোই ছিল একটি অত্যাধুনিক সাইবার আক্রমণের প্রাথমিক ইঙ্গিত—যেখানে ব্যবহারকারীর কোনো প্রকার ক্লিক ছাড়াই হ্যাকাররা ফোনে ঢুকে পড়তে পেরেছে বলে ধারণা।

হ্যাকারদের পরিচয় সম্পর্কে কোনো সরাসরি প্রমাণ পাওয়া না গেলেও, সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা iVerify তদন্ত করে দেখতে পায় যে ভুক্তভোগীরা সবাই এমন পেশায় যুক্ত, যেগুলো চীনা সরকারের আগ্রহের ক্ষেত্র। এদের আগেও চীনা হ্যাকারদের টার্গেটে পড়তে হয়েছে।

জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশি হ্যাকাররা দিন দিন স্মার্টফোন ও মোবাইল অ্যাপগুলোকেই মার্কিন সাইবার প্রতিরক্ষার দুর্বলতম অংশ হিসেবে চিহ্নিত করছে। চীনের সামরিক ও গোয়েন্দা সংস্থাসংক্রান্ত হ্যাকার গ্রুপগুলো এরইমধ্যে মার্কিন বিশিষ্ট নাগরিকদের স্মার্টফোন টার্গেট করেছে এবং টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কে গভীরভাবে অনুপ্রবেশ করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোবাইল ডিভাইস ও অ্যাপগুলোর দুর্বলতা কেবল ব্যক্তিগত তথ্য নয়, বরং জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তাকেও মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

“বিশ্ব বর্তমানে এক মোবাইল নিরাপত্তা সংকটের মধ্যে আছে,” বলেন iVerify-এর প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা এবং NSA ও গুগলের সাবেক সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক রকি কোল। “কারও নজর নেই মোবাইল ফোনের ওপর।”

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে দেয়—চীন থেকে পরিচালিত একটি বিশাল হ্যাকিং অভিযানের বিষয়ে, যার লক্ষ্য ছিল অজানা সংখ্যক মার্কিন নাগরিকের টেক্সট ও ফোনালাপ হ্যাক করা।

“তারা ফোনালাপ লাইভ শুনতে পারছিল এবং টেক্সট বার্তা পড়তে পারছিল,” বলেন হাউস ইন্টেলিজেন্স কমিটির সদস্য এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টি বিষয়ক হাউস কমিটির প্রধান ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি রাজা কৃষ্ণমূর্তি।

এই আক্রমণে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জেডি ভ্যান্স-এর ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালীন ব্যবহৃত ফোনও টার্গেট হয়েছিল।

চীন সরকার অবশ্য এসব সাইবার গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং পাল্টা অভিযোগ তুলেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র নিজের সাইবার অভিযানের দায়িত্ব চীনের ওপর চাপাচ্ছে। চীন দাবি করছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র অজুহাতে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং বিশ্ববাজারে তাদের বাধা দিচ্ছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বহুদিন ধরে অন্য দেশের গোপন তথ্য চুরি করতে নানা ঘৃণ্য পদ্ধতি ব্যবহার করছে,”—এই মন্তব্যটি সিআইএর পক্ষ থেকে চীনা তথ্যদাতাদের নিয়োগ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে আসে।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, চীন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য একটি “গুরুতর ও স্থায়ী” হুমকি তৈরি করছে। তারা ডিজিটাল সংঘাতের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে অনলাইন প্রোপাগান্ডা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার নজরদারি ও গুপ্তচরবৃত্তি—যা ভবিষ্যতের যেকোনো সামরিক সংঘাতে তাদের বড় ধরনের কৌশলগত সুবিধা দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র এবং তার অনেক মিত্র দেশ ইতোমধ্যেই চীনা টেলিকম কোম্পানিগুলোকে নিজেদের নেটওয়ার্ক থেকে নিষিদ্ধ করেছে। জার্মানিসহ আরও কিছু দেশ এখন চীনা প্রযুক্তির অংশগ্রহণ ধীরে ধীরে কমিয়ে আনছে। কিন্তু অনেক দেশেই চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো সক্রিয়, যা হ্যাকারদের জন্য বৈশ্বিক সুযোগ তৈরি করছে।

এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও কিছু চীনা টেলিকম প্রতিষ্ঠান এখনো রাউটিং ও ক্লাউড স্টোরেজ পরিকাঠামো পরিচালনা করছে, যা আইনপ্রণেতাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।

সানজানা

×