ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

ইংলিশ বাজবল দেখল বিশ্ব ক্রিকেট

ফয়সাল আহমেদ

প্রকাশিত: ০১:০২, ২৬ জুন ২০২৫

ইংলিশ বাজবল দেখল বিশ্ব ক্রিকেট

হেডিংলি টেস্টে দলকে দারুণ এক জয় উপহার দেওয়া দুই ইংলিশ ব্যাটার জো রুট ও জেমি স্মিথ

ইংল্যান্ডের কোচ হওয়ার পর থেকেই টেস্ট ক্রিকেটে বাজবলের প্রচলন শুরু করেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। সাধারণত টেস্টে ক্রিকেটে ওভার প্রতি ৩.৫০ থেকে ৩.৮০ করে রান তুলতে পারেন ক্রিকেটাররা। সেখান থেকে ম্যাককালাম ইংলিশদের ক্রিকেটে ৪.৫৪ পর্যন্ত নিয়ে গেছে। ভারত প্রথম ইনিংসে ৪.১৪ গড়ে ৪৭১ রান সংগ্রহ করে। সেই রান ৪.৬১ গড়ে তাড়া করে স্বাগতিকরা।

দ্বিতীয় ইনিংসে সফরকারীরা ৩.৭৯ গড়ে আগের ইনিংসের ৬ রানের লিডসহ ৩৭১ রানের টার্গেট দেয়। জবাবে ৫ উইকেট হাতে রেখেই ৪.৫৪ গড়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বেন স্টোকসের দল। এই জয়ে আরও একবার ইংলিশ বাজবল দেখল বিশ^ ক্রিকেট, দেখল ভারতও। দারুণ জয়ে অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকর পাঁচ ম্যাচ সিরিজে ১-০তে জয়ে ট্রফির দিকে এগিয়ে গেল বেন স্টোকসের দল।  
ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে হেডিংলি টেস্টে এই প্রথম পাঁচজন ব্যাটার সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। তারপরও হার ঠেকাতে পারলেন না অধিনায়ক শুভমান গিলের দল। ভারতে হয়ে প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন যশস্বী জয়সওয়াল (১০১), শুভমান গিল(১৪৭) ও ঋষভ পন্থ (১৩৪)। দ্বিতীয় ইনিংসে লুকেশ রাহুল(১৩৭) ও ঋষভ পন্থ (১১৮) রানের ইনিংস খেলেন। জবাবে দুই ইনিংসে দুই ইংলিশ ব্যাটার অলি পোপ (১০৬) ও দ্বিতীয় ইনিংসে বেন ডাকেট (১৪৯) সেঞ্চুরি করেছেন। প্রথম ইনিংসে হ্যারি ব্রুক করেছেন ৯৯। তারপরও হেডিংলিতে রেকর্ড রান তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে স্বাগতিক ইংল্যান্ড।
এতেই এক টেস্টে পাঁচ সেঞ্চুরি করেও প্রথম পরাজিত দল হিসেবে ইতিহাসে নাম তুলেছে ভারত। প্রায় একশ’ বছর আগে এক টেস্টে চার সেঞ্চুরি করে হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। ১৯২৮-২৯ মৌসুমে মেলবোর্নে জয় পেয়েছিল ইংল্যান্ড। টেস্টে চতুর্থ সর্বাধিক ৮৩৫ রান করে পরাজিত দলে ভারত। এর আগে ৮৩৭ ও ৮৪৭ করে ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছিল যথাক্রমে নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তান। ১৯৪৮ সালে ৮৬১ করে অজিদের কাছে হেরেছিল ইংল্যান্ড। 
হেডিংলি অবশ্য বরাবরই রান তাড়া করার ভেন্যু হিসেবে পরিচিত। সেখানে সর্বশেষ ছয় টেস্টে পরে ব্যাট করা দল জিতেছে। সাড়ে তিনশ’ রান তাড়া করে জয়ের এটি তৃতীয় ঘটনা। এছাড়া ৩৭১ রান তাড়া ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সর্বাধিক। ভারতেরও দ্বিতীয় সর্বাধিক রানের লিড নিয়েও হারের লজ্জা এটি।
তারপরও ভারতের রান ছুঁয়ে ফেলার কারণ ইংল্যান্ডের বেন ডাকেট প্রথম ইনিংসে ৬২, জেমি স্মিথ ৪০ ও ক্রিস ওকস ৩৮ রান করেছিলেন। তিন সেঞ্চুরির বাইরে ভারতের কোনো ব্যাটার সেভাবে রান পাননি। কেবল কেএল রাহুল ৪২ রান করেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও একই দশা হয়েছে ভারতের। রাহুল ১৩৭ রানের ইনিংস খেলেন। পন্থ ১১৮ রান যোগ করেন। ৩৬৪ রান করা ইনিংসে ভারতের তৃতীয় সর্বাধিক রান ছিল সাই সুদর্শনের ২৫।
ভারতের দেওয়া ৩৭০ রানের লিড তাই অলি পোপের ১৪৯ রানে তুলে ফেলেছে ইংল্যান্ড। অবশ্য কার্যকরী ইনিংস খেলেছেন স্বাগতিকদের আরও চার ব্যাটার। ওপেনার জ্যাক ক্রলি ৬৫ রান করে ১৮৮ রানের ওপেনিং জুটি দিয়ে ম্যাচের চিত্র ঘুরিয়ে দেন। জো রুট ৫৩ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন। বেন স্টোকস ৩৩ রান করে ফিরলেও জেমি স্মিথ ৪৪ রান যোগ করেন।
আর এই টেস্টে বেন ডাকেটের ১৪৯ রান ভারতের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। এটি পেছনে ফেলেছে জো রুটের ২০২২ সালে এজবাস্টনের অপরাজিত ১৪২ রানের ইনিংসকে। ২০১০ সালের পর প্রথম ইংলিশ ওপেনার হিসেবে চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছেন ডাকেট। ২০১০ সালে অ্যালিস্টার কুক মিরপুরে বাংলাদেশের বিপক্ষে করেছিলেন অপরাজিত ১০৯ রান।

ডাকেট ও জ্যাক ক্রলির ১৮৮ রানের উদ্বোধনী জুটিটিই টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটি। এটি ইংল্যান্ডের ইতিহাসেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটি। এছাড়া প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা টেস্ট ইতিহাসে প্রথম বোলার, যিনি দুই ইনিংসে ৯০-এর বেশি রান খরচ করেছেন এবং ওভার প্রতি ৬ রানের বেশি দিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে: ২০ ওভারে ১২৮ রান (ইকোনমি ৬.৪০) এবং
দ্বিতীয় ইনিংসে: ১৫ ওভারে ৯২ রান (ইকোনমি ৬.১৩)।

×