ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

রক্তনালী সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ: শরীর যখন সতর্ক সংকেত দেয়, গুরুত্ব দিয়ে খেয়াল করুন

প্রকাশিত: ০০:০৩, ২৫ জুন ২০২৫; আপডেট: ০০:০৪, ২৫ জুন ২০২৫

রক্তনালী সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ: শরীর যখন সতর্ক সংকেত দেয়, গুরুত্ব দিয়ে খেয়াল করুন

ছবিঃ সংগৃহীত

রক্তনালীর অসুখ মানেই হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক নয়। অনেক সময় তা শুরু হয় সাধারণ কিছু উপসর্গ দিয়ে, যেগুলো আমরা প্রায়ই উপেক্ষা করি — হাঁটার সময় পায়ে টান, পায়ের আঙ্গুল ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, অকারণে ক্লান্তিভাব।

ভাসকুলার (রক্তনালী) সমস্যাগুলো আমাদের শরীরের সার্বিক রক্ত চলাচলে বাধা তৈরি করে এবং এর প্রভাব দেখা দিতে পারে নানান অপ্রত্যাশিত উপসর্গে। তবে সময়মতো এসব লক্ষণ শনাক্ত করতে পারলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

রক্ত চলাচলের রাস্তা যদি বন্ধ হয়ে যায়...
ভাসকুলার সার্জন ড. কার্তিক মিক্কিনেনি জানিয়েছেন, "আপনার ধমনিগুলো হচ্ছে শরীরের অক্সিজেন সরবরাহের মহাসড়ক। যদি কোনো জায়গায় বাধা আসে, তবে তার নিচের অংশে রক্ত ঠিকমতো পৌঁছায় না।"

এই ধরণের ব্লকেজের একটি সাধারণ কারণ হচ্ছে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস, যেখানে ধমনির ভেতরে চর্বি জমে যায়। শরীরের যেই অংশে এটা হয়, সেখানেই উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন—

  • পায়ে হলে হাঁটার সময় ব্যথা বা টান পড়ে,
  • পেটে হলে খাওয়ার পর ব্যথা হয়,
  • হাতে হলে চুল আঁচড়াতে গেলেও ভারী লাগে।

আপনার শরীর যেসব উপসর্গ দিয়ে সতর্ক করছে:
ড. মিক্কিনেনি নিচের ১০টি লক্ষণ নজরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন—

  • পায়ে টান বা ব্যথা: হাঁটার সময় পায়ের পেছনের দিকে ব্যথা বা টান লাগা, যা বিশ্রামের পর কমে যায়—এটি রক্ত চলাচলের সমস্যা হতে পারে।
  • খাওয়ার পর পেটে ব্যথা: প্রতিবার খাওয়ার পর পেটে মোচড় ধরা বা অস্বস্তি এবং ওজন কমে যাওয়া—এই উপসর্গগুলো অন্ত্রের রক্ত সরবরাহে বাধা নির্দেশ করতে পারে।
  • ঠান্ডা পায়ের আঙুল: বিশেষ করে ঠান্ডা আবহাওয়ায় পায়ের আঙুল সাদা বা নীল হয়ে যাওয়া রক্ত চলাচলের দুর্বলতার লক্ষণ হতে পারে।
  • পায়ে ক্ষত সারতে দেরি হওয়া: পা বা পায়ের পাতায় ঘা হলে তা সহজে না শুকানো, কারণ হতে পারে রক্তের অক্সিজেন ঠিকমতো পৌঁছায় না।
  • পায়ে দুর্বল পালস: পায়ে অথবা গোড়ালিতে স্পষ্ট পালস না পাওয়া ধমনীতে ব্লকেজের ইঙ্গিত হতে পারে।
  • এক হাতে সবসময় কম প্রেসার: যদি একটি হাতে বারবার রক্তচাপ কম থাকে, তবে ওই পাশের ধমনী সরু হয়ে গেছে কিনা তা পরীক্ষা করা দরকার।
  • হাত ভারী লাগা: হাত তুললে ভারী বা ক্লান্ত লাগে—এটি উপরের অংশের রক্ত চলাচলের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
  • অকারণে ক্লান্তিভাব: ব্যাখ্যাতীত ক্লান্তিভাব বা অলসতা—রক্ত ঠিকমতো না পৌঁছানোয় শরীর পর্যাপ্ত শক্তি পায় না।
  • চামড়ার পরিবর্তন: পায়ে ত্বক চকচকে বা পাতলা হয়ে যাওয়া, চুল কমে যাওয়া—সবই রক্তপ্রবাহ কমার দীর্ঘমেয়াদি লক্ষণ।
  • এক পায়ে ফোলা: কোনো চোট ছাড়াই এক পা হঠাৎ ফুলে যাওয়া ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস বা শিরার সমস্যার সংকেত হতে পারে।

ছোট উপসর্গেও সচেতন হোন
শরীর অনেক সময় ছোট ছোট লক্ষণ দিয়ে বড় অসুবিধার আগাম বার্তা দেয়। যেমন, কেউ কেউ বলেন — হাত ভারী লাগছে, ঠান্ডা পড়লেই আঙুলে ঝিনঝিন করছে, অথবা হঠাৎ করে খাওয়ার ইচ্ছা কমে যাচ্ছে। এসবকে আলাদা সমস্যার মতো মনে হলেও এগুলো রক্তনালীর সমস্যার সংকেত হতে পারে।

রে’নোডস সিনড্রোম-এর মতো অবস্থাও কিছুটা সাধারণ মনে হলেও এর পেছনে থাকতে পারে গুরুতর ভাসকুলার অসুখ।

পরামর্শ:
এই উপসর্গগুলোর মধ্যে একটি বা একাধিক লক্ষণ যদি নিয়মিতভাবে দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

দায়বদ্ধতা অস্বীকার: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য। স্বাস্থ্য নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরামর্শের জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।


 

মারিয়া

×