
ছবি:সংগৃহীত
ওজন কমানো মানেই কি না খেয়ে থাকা আর ক্যালরি গুনে গুনে চলা? না, একেবারেই নয়—বলছেন ড. জেমস ডি নিকোল্যান্টোনিও। তিনি একজন হার্ট স্পেশালিস্ট ও পুষ্টিবিদ গবেষক, যিনি এখন মানুষের মধ্যে নতুনভাবে ভাবতে শেখাচ্ছেন: ওজন কমাতে হলে এমন খাবার খেতে হবে, যা আমাদের ক্ষুধা মেটায়।
তার মতে, ক্ষুধার্ত না থেকেই মেদ ঝরানো সম্ভব—শুধু দরকার সঠিক খাবারের। তার সুপারিশ করা চারটি খাবার হলো: মাংস, ডিম, দুধ-দই-পনির (পূর্ণচর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত), আর অ্যাভোকাডো।
কিন্তু কেন এগুলো?
বর্তমান সময়ে ওজন কমানোর নামে আমরা অনেকেই নিজের শরীরকে না খাইয়ে রাখছি, ঘন ঘন ছোট খাবার খাচ্ছি বা ক্যালরির হিসাব মিলাচ্ছি। কিন্তু এসবের ফলে অনেক সময় হিতে বিপরীত হয়—ক্ষুধা বেড়ে যায়, শরীর দুর্বল হয়, মন মরে যায়।
ড. ডি নিকোল্যান্টোনিও বলেন, ‘‘যদি আপনি এমন খাবার খান যা পেট ভরে রাখে ও শরীরের চাহিদা মেটায়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই কম খাবেন। তখন আপনাকে আলাদা করে কম খাওয়ার জন্য চাপ নিতে হবে না।’’
✅ এই ৪টি খাবার কেন কাজে দেয়?
১. মাংস
মাংসে আছে উচ্চমানের প্রোটিন, ভিটামিন বি, আয়রন, দস্তা ইত্যাদি। এগুলো শুধু পেট ভরেই না, পেশী ঠিক রাখতেও সাহায্য করে। বিশেষ করে চর্বিহীন মাংস রক্তে শর্করা স্থির রাখে এবং দীর্ঘ সময় খিদে লাগে না।
২. ডিম
ডিম এমন একটি খাবার যেখানে কম ক্যালরিতে অনেক পুষ্টি রয়েছে—প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি, কোলিন আর লুটেইন। সকালের নাশতায় ডিম খেলে সারাদিন কম খেতে হয় কারণ খিদে কমে যায়।
৩. পূর্ণচর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার (দুধ, দই, পনির)
এগুলো শুধু ক্যালসিয়াম আর প্রোটিন নয়, গাট বা অন্ত্রের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে প্রোবায়োটিক দিয়েও সমৃদ্ধ। ওজন কমাতে চর্বিহীন দুধের চেয়ে পূর্ণচর্বিযুক্ত দুধ বেশি কার্যকর হতে পারে, কারণ এটি বেশি সময় পেট ভরিয়ে রাখে।
৪. অ্যাভোকাডো
এই ফলটি স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, পটাসিয়াম ও আঁশে ভরপুর। অ্যাভোকাডো হজম ধীরে করে, ফলে শক্তি দীর্ঘ সময় ধরে পাওয়া যায় এবং খিদে কমে যায়।
চিনি খেতে ইচ্ছে হলে কী করবেন?
ড. ডি নিকোল্যান্টোনিওর মতে, চিনি খাওয়ার ইচ্ছা অনেক সময় আসলে খনিজ বা লবণের ঘাটতির ফল। তিনি বলেন, এমন সময়ে ফল, আচারের রস বা একটু লবণ খেলে সেই খিদে সাময়িকভাবে মেটে। বিশেষ করে লো-কার্ব খাবার খেলে শরীর লবণের ঘাটতি অনুভব করে, তাই লবণ দরকার।
ওজন বাড়ে কেন? তার মতে...
তার জনপ্রিয় বই The Obesity Fix-এ তিনি বলেন, “ওজন বাড়া মানেই আপনি বেশি খাচ্ছেন বা অলস—এই ধারণা ভুল। আসল কারণ হলো হরমোন ও বিপাকীয় ভারসাম্য হারানো, প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া, এবং শরীরের ক্ষুধার সংকেতের গণ্ডগোল।”
তাই ওজন কমাতে হলে ক্যালরি গোনা নয়—খেতে হবে এমন খাবার যা সত্যিকারের খিদে মেটায় ও শরীরকে পুষ্ট করে।
ক্যালরি নয়, আত্মবিশ্বাসই হোক হাতিয়ার
এই পদ্ধতিতে আপনি না খেয়ে থাকবেন না, কষ্টও করবেন না—আপনার শরীর নিজেই আপনাকে জানান দেবে কখন খেতে হবে আর কখন নয়। এটা কোনো নিয়মে বাঁধা নয়—এটা শরীরকে ভালোবাসা।
মারিয়া