
সকালে ঘুম থেকে ওঠা অনেকের কাছেই চ্যালেঞ্জিং, বিশেষ করে কর্মজীবীদের জন্য। কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে সফল কিছু মানুষ তাঁদের জীবনের মোড় ঘুরিয়েছেন ভোরে ঘুম থেকে উঠে। ব্যবসা, প্রযুক্তি কিংবা আইনের জগতে যাঁরা শীর্ষে পৌঁছেছেন, তাঁদের দিনের শুরু হয় সূর্য ওঠারও আগে। এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো তিনজন সফল ব্যক্তিকে, যাঁরা সকালে ওঠাকেই সফলতার চাবিকাঠি মনে করেন।
ভ্যানগার্ড গ্রুপের চেয়ারম্যান বিল ম্যাকনাব: সকাল ৫টায় ওঠা, ৬:১৫-এ ডেস্কে পৌঁছানো
ভ্যানগার্ড গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাবেক সিইও বিল ম্যাকনাব গত তিন দশক ধরে তাঁর সকালের রুটিনের খুব একটা পরিবর্তন করেননি। তিনি জানান, "গত ৩০ বছরে আমার দৈনন্দিন রুটিনে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিটের ভিন্নতা এসেছে। ২০০৮ সালে ভ্যানগার্ডের সিইও হওয়ার পর আমি আরও একটু আগেই অফিসে যেতাম, যেন সকালেই প্রস্তুতি সেরে নিতে পারি।"
ম্যাকনাব প্রতিদিন সকাল ৫টা থেকে ৫:১৫-এর মধ্যে ঘুম থেকে ওঠেন, পথে এক কাপ কফি তুলে নেন এবং ৫:৪৫ থেকে ৬:১৫-এর মধ্যে অফিসে পৌঁছে যান। তাঁর মতে, সকাল ৬টা থেকে ৭:৩০ পর্যন্ত সময়টাই সবচেয়ে ফলপ্রসূ। এই সময়ে তিনি পড়েন, ভাবেন ও দিনের পরিকল্পনা ঠিক করেন। তিনি বলেন, “এই নিরব সময়টা আমি খুব যত্ন করে আগলে রাখি।”
ওয়াশিংটন স্টেটের অ্যাটর্নি জেনারেল বব ফার্গুসন: পরিবারের জন্য ভোরে উঠে নাস্তা তৈরি
ওয়াশিংটনের অ্যাটর্নি জেনারেল বব ফার্গুসনের মতে, “আপনার দিনটি যেভাবে শুরু হয়, সেটিই সবকিছু নির্ধারণ করে।” তিনি প্রতিদিন সকাল ৫টা থেকে ৬:৩০-এর মধ্যে ঘুম থেকে ওঠেন, যেন নিজের জন্য ও পরিবারের জন্য সময় বের করতে পারেন।
প্রথমে তিনি নিজের জন্য কিছু সময় রাখেন কফি, সকালের খবর, ও নাস্তা নিয়ে। এরপর স্ত্রী ও সন্তানদের ঘুম থেকে তোলেন এবং পরিবারের সবাই মিলে সকালের নাস্তা উপভোগ করেন। ফার্গুসন বলেন, “দফতরে বৈঠক লম্বা হতে পারে, নানা ব্যস্ততায় দিন শেষে পরিবারের সঙ্গে সময় মেলে না। তাই সকালটাই আমার জন্য সবচেয়ে মূল্যবান।”
ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট ব্র্যাড ফেল্ড: সকাল ৫:৩০ থেকে ৯টার মধ্যে ঘুম ভাঙে, দেখেন দিনের শুরু
ফাউন্ড্রি গ্রুপের ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট ব্র্যাড ফেল্ড নিয়মিত সকালে ওঠেন, যদিও এখন আর নির্দিষ্ট অ্যালার্মে নয়। তিনি জানান, “পাঁচ বছর আগে আমি প্রতিদিন সকাল ৫টায় ঘুম থেকে উঠতাম, যেই টাইম জোনেই থাকি না কেন। কিন্তু এক পর্যায়ে মারাত্মক বিষণ্নতায় পড়ি এবং তখন সিদ্ধান্ত নিই, অ্যালার্ম ছাড়াই ঘুম থেকে উঠব। এখন আমি স্বাভাবিকভাবেই ঘুম ভাঙা পর্যন্ত ঘুমাই, তা সকাল ৫:৩০-ও হতে পারে আবার ৯টা-ও।”
ঘুম থেকে উঠে ব্র্যাড নিজের ওজন মাপেন, দাঁত মাজেন, কফি তৈরি করেন এবং এরপর স্ত্রী ও কুকুরদের সঙ্গে চার মিনিট বসে থাকেন। তিনি বলেন, “আমরা একসঙ্গে বসি, একটু গল্প করি, পাখির ডাক শুনি আর দিনের সূচনা দেখি। এই মুহূর্তটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।”
সকালে উঠলেই কি সফলতা আসে?
এই তিনজন সফল মানুষের অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, সকালের সময়টুকু শুধু নিজের জন্য রাখলে তা দারুণ ইতিবাচক প্রভাব ফেলে জীবনের ওপর। পরিকল্পনা, চিন্তাভাবনা এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ তৈরি হয়। যদিও সকালের মানুষ হয়ে ওঠা সবার জন্য সহজ নয়, তবে সঠিক রুটিন, শৃঙ্খলা ও মানসিক প্রস্তুতির মাধ্যমে যেকেউ এই অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে।
সাফল্যের পথে হাঁটতে চাইলে হয়তো সূর্য ওঠার আগেই ঘুম থেকে জেগে ওঠা আপনার জন্যও এক নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।
সূত্র:https://tinyurl.com/46sjwmwp
আফরোজা