ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সমুদ্র যেন টাইম বোমা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:২৮, ১৪ জুন ২০২৫

সমুদ্র যেন টাইম বোমা

ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীর সাগরপৃষ্ঠ এখন আগের চেয়েও বেশি বিপদের মুখে। নতুন এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে, সমুদ্রে অ্যাসিড বা অম্লতার মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে ২০২০ সালেই তা "বিপজ্জনক সীমা" অতিক্রম করেছে। এটি শুধু পরিবেশগত বিপর্যয় নয়, বরং বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং কোটি মানুষের জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

কী বলছে গবেষণা?
৯ জুন Global Change Biology জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, গ্লোবাল ওশান অ্যাসিডিফিকেশন এখন সেই মাত্রায় পৌঁছেছে যেখানে জীবন টিকে থাকা কঠিন হয়ে উঠছে। সাগরের উপরিভাগের পানিতে এখন প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় ১৭.৩% কম অ্যারাগোনাইট (aragonite) রয়েছে। এটি হলো সেই খনিজ, যেটি সামুদ্রিক প্রাণীরা তাদের খোলস ও কঙ্কাল তৈরিতে ব্যবহার করে।

গবেষকেরা জানিয়েছেন, ২০% অ্যারাগোনাইট হ্রাসই বিপজ্জনক সীমা। এখনকার মাপজোকে এই সীমা হয়ত ইতোমধ্যেই পেরিয়ে গেছে, বিশেষ করে গভীর পানিতে।

অ্যাসিড বাড়ে কীভাবে?
মানবজাতির কল-কারখানা, জ্বালানির ব্যবহার এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের ফলে প্রতি বছর প্রায় ৩০% CO₂ সমুদ্র শোষণ করে নেয়। এটি পানিতে মিশে তৈরি করে কার্বোনিক অ্যাসিড, যা পরে ভেঙে গিয়ে তৈরি করে হাইড্রোজেন আয়ন। এই আয়নগুলি কার্বোনেট আয়নের সঙ্গে মিশে বাইকার্বোনেট তৈরি করে, যা সামুদ্রিক প্রাণীদের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।

এর ফলে প্রবাল, ঝিনুক, ক্ল্যাম এবং প্ল্যাঙ্কটনের মতো প্রাণীরা কঙ্কাল ও খোলস গঠন করতে পারছে না, যা সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তা
প্লাইমাউথ মেরিন ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানী স্টিভ উইডিকম্ব বলছেন, “সমুদ্র অ্যাসিডিফিকেশন শুধু পরিবেশগত নয়, এটা এক ভয়াবহ টাইম বোমা। এর প্রভাবে গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক আবাস হারিয়ে যাচ্ছে এবং উপকূলীয় জনগোষ্ঠী জীবিকা হারানোর ঝুঁকিতে।”

গবেষণার প্রধান লেখক হেলেন ফিন্ডলে বলেন, “সমুদ্রের নিচের স্তরগুলোতে অ্যাসিড বাড়ছে আরও দ্রুত। অথচ ওখানেই রয়েছে অধিকাংশ সামুদ্রিক প্রাণীর আবাস।”

২০০৯ সালে বিজ্ঞানীরা মোট ৯টি ‘প্ল্যানেটারি বাউন্ডারি’ চিহ্নিত করেন যা পৃথিবীর স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন, রাসায়নিক দূষণ ও সমুদ্র অ্যাসিডিফিকেশন।

২০২৩ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, এর মধ্যে ৬টি সীমা ইতিমধ্যেই অতিক্রম করা হয়েছে। তখনো অ্যাসিডিফিকেশন সীমার কাছাকাছি ছিল। কিন্তু নতুন গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, সেটিও ভেঙে পড়েছে।

ক্যাথরিন রিচার্ডসন, যিনি আগের গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, নতুন ফলাফলে অবাক হননি। তিনি বলেন, “আমরা আগেই বলেছিলাম এটি খাদের কিনারে রয়েছে। এখন CO₂ আরও বেড়েছে, তাই এটি সীমা ছাড়াবে—এটাই স্বাভাবিক।”

কোন অঞ্চল বেশি ঝুঁকিতে?
গবেষণায় দেখা গেছে, সমুদ্রের ৪০% উপরিভাগ এবং ৬০% গভীর পানি ইতোমধ্যেই বিপজ্জনক সীমা পার হয়ে গেছে। নিচের স্তরের অ্যাসিড মাত্রা আরও বেড়ে চলেছে এবং ভবিষ্যতে এটাই বেশি ক্ষতি করবে বলে আশঙ্কা।

মুমু ২

×