
ছবি: সংগৃহীত
তখন আমাদের ঘরটা খুব একটা বড়ো ছিলো না। একটা মাত্র ঘর, যেখানে ঘুম, রান্না, পড়া সবকিছুই হতো। বৃষ্টি নামলে চালের ফাঁক দিয়ে পানি পড়তো। মা তখন একটা পুরোনো কাঁথা দিয়ে ফুঁটে যাওয়া জায়গাটা চেপে ধরতেন। আর বাবা… বাবা চুপচাপ কোণার খাটের এক পাশে বসে থাকতেন। ঘরে ফ্রিজ নেই, ওয়াইফাই নেই, এমনকি একটা ভালো বালিশও নেই—তবুও সেটাই ছিল আমার বাবার রাজ্য। ছোটবেলায় যখন বই চাইতাম, বাবা বলতেন, “এই মাসটা একটু কষ্ট কর, পরের মাসেই দিব।” কিন্তু সেই ‘পরের মাস’ কখনো কখনো আসত না।
আমি তখন রাগ করতাম, চিৎকার করতাম, এমনকি মুখ ফুলিয়ে রাখতাম তখনও বুঝিনি, বাবা প্রতিদিন নিজের চাওয়া-মনে পুড়িয়ে আমাদের চাহিদা পূরণ করতেন। মা বলতেন, "তোর আব্বা না হলে, এই ঘরটা ভেঙে পড়তরে।” তখন বুঝতাম না কথার অর্থ। এখন বুঝি, ঘরের চালের মতোই এই সংসারও ভেঙে পড়তো যদি বাবা দিনের পর দিন নিজের স্বপ্ন, নিজের স্বস্তি, নিজের শান্তি—সব কিছু বিসর্জন না দিতেন। আমাদের ঘরে ছোট্ট একটি ফ্যান আছে, কিন্তু বাবার দিকে বাতাস যায় না। কারণ তিনিই দেন আরেকজনের গায়ে বাতাস লাগুক বলে নিজে গা ভেজান ঘামে।
একদিন রাতে হঠাৎ উঠে দেখি বাবা চুপচাপ কাঁদছেন। জিজ্ঞেস করতেই বললেন, “তোর জন্য দোয়া করছিলাম… আর কিছু না।” সেই রাতে আমি ঘুমাতে পারিনি। উপবৃত্তির টাকা পেয়ে বাবার হাতে কিছু দিয়েছিলাম, হাতে টাকা তুলে দিতেই তিনি অবাক হয়ে তাকালেন। বলছেন, “তুই আমাকে দিলি? আমি তো শুধু দিতে শিখেছি!”
আজ বাবা দিবস। আজ আমাদের অনেক কিছুই হয়েছে, তবে শুধু এটুকু বলতে চাই। বাবা, তুমি এখনো আমার সবচেয়ে বড় আশ্রয়, আমার নীরব ভালোবাসার উৎস। তুমি কাঁদো না বলেই, আজও আমি হাসির সাহস পাই।
ফারুক