
ছবি: জনকণ্ঠ
এলো আষাঢ়, এলো বাদলঝরা দিন। এমন দিনের কাছেই যেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর করেছেন আত্মসমর্পণ— ‘একলা ঘরে বসে আছি, কেউ নেই কাছে, সারাটা দিন মেঘ করে আছে।’
তাঁর ‘বাদল’ কবিতাটির মতোই প্রকৃতিতে যেন সেই বাদল দিনের ছবি দেখছি— সারাদিন আকাশভরা মেঘ, সারাদিন বৃষ্টি, সারাদিন বাদল হাওয়া; চারিদিক আঁধার হওয়া, মাঝেমধ্যে দূর কোনো সবুজ বনের মাথায় বজ্রের ঝিলিক মিলিয়ে যাওয়া।
দমকা হাওয়ায় কড় কড় করে বাঁশে বাঁশ ঘষে ডেকে ওঠে প্রকৃতি, জলভরা জলাশয়ে পদ্মপাতায় ওঠে ব্যাঙের নাচন আর বেসুরো সংগীত, টিনের চালে রিমঝিম রিমঝিম আর পুকুরজলে টাপুরটুপুর বৃষ্টির মূর্ছনা, যেন নিয়ে যায় কোনো স্বপ্নলোকে। কানে বাজে কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই গান— ‘রিমি ঝিম্ রিমি ঝিম্ ঐ নামিল ধেয়া। শুনি শিহরে কদম, বিদরে কেয়া।’
ঘরে বসে হৃদয় দিয়ে অনুভব করছি সেই বাদল দিনের প্রথম কদমফুল ও কেয়ার গন্ধ। আশপাশের বাগান থেকে ভেসে আসছে দোলনচাঁপা, স্বর্ণচাঁপা ও কাঁঠালিচাঁপার ঘ্রাণ। চোখ মুদে দেখতে পাচ্ছি দূরে ধূসর হয়ে নামছে বাদলের ধারা, কর্দমাক্ত পথঘাট, সেই বৃষ্টির আনন্দে আত্মহারা কৃষক-জেলেরা।
বৃষ্টিভেজা মাঠে নামবে হাল, গ্রামে গ্রামে হবে হলকর্ষণের উৎসব। নরম মাটির বুক চিরে লাগানো হবে আমন ধানের চারা।
তেমনি পুকুর-ডোবা, বিল-ঝিল ভরে উঠবে নতুন পানিতে, জেলেদের জালে উঠবে পুঁটি, রৈনা, ডানকনা, খলসে, বোয়াল মাছ। আমাদের পাতে উঠবে সেসব মাছের ঝোল, ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে উঠতে পারে ইলিশও।
আর পাখিরা! বর্ষাকাল মাছরাঙা, বুলবুলি, টিয়া, ফিঙে, বক, শালিক, ভাতশালিক, ময়না, হরিয়ালসহ প্রায় সব আবাসিক পাখিরই প্রজননকাল।
বাংলায় আষাঢ়-শ্রাবণ মিলে বর্ষাকাল। আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন। বর্ষার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু। কৃষ্ণচূড়া যেমন গ্রীষ্মের প্রতীক, কদম তেমনি বর্ষার। পঞ্জিকার পাতা না দেখেও কদমফুলের ফোটা দেখে বলে দেওয়া যায়, বর্ষাকাল এসেছে। এই বর্ষাকাল ভরে উঠুক বৃষ্টি ও কদমফুলে— সে রকমই প্রত্যাশা কবিদের। বনবাণী কাব্যে রবীন্দ্রনাথ বর্ষাকালের প্রত্যাশা করেছেন ‘প্রত্যাশা’ কবিতায়:
‘অঝোর-ঝরণ শ্রাবণজলে, তিমিরমেদুর বনাঞ্চলে, ফুটুক সোনার কদম্বফুল নিবিড় হর্ষণে।’
বর্ষা আর কদম যে কত কবিতা ও গানে আশ্রয় নিয়েছে, তার হিসাব মেলানো যাবে না। কবি কালিদাস থেকে রবীন্দ্রনাথ— সবাই করেছেন কদমের স্তুতি। কবি কালিদাস তাঁর ‘ঋতুসংহার’ কাব্যের দ্বিতীয় সর্গে বর্ষার বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন:
‘কদম, বকুল, কেতকী কুসুমে গাঁথিয়া মোহন মালিকা, বিলাসিনীদল আজি কুন্তলে বাঁধে।’
মুমু ২