ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

বাবা হিসেবে আমার আত্মগল্প

ইসমাইল হোসেন সজীব, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, চাটখিল, নোয়াখালী

প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ১৫ জুন ২০২৫

বাবা হিসেবে আমার আত্মগল্প

ছবি: সংগৃহীত

বাবা হওয়াটা একটা বিশেষ আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসা এবং পরম দায়িত্বশীলতার বহিঃপ্রকাশ। দায়িত্বশীল বেশিরভাগ পুরুষই বাবা হওয়ার পর নিজের জন্য বাঁচেন না, বাঁচেন শুধুই সন্তানদের জন্য।

এই তো সেদিন, আমার ছোট্ট মেয়েটার বয়স তখন ৬-৭ মাস। হঠাৎ দুপুরবেলা ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফিরে দেখি ঘরে কান্নার শব্দ—সবাই কাঁদছে। ঘরে ঢুকেই দেখি, আমার মেয়েটার খিচুনি হয়েছে, মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে। মনে হলো, বুঝি মরেই গেল!

সবার মতো হাউমাউ করে একজন পুরুষ কাঁদতে পারেন না, কিন্তু ভেতরটা তখন কষ্টে ফেটে যাচ্ছিল। কান্না না করে মেয়েটাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম—একটার পর একটা হাসপাতালে ছুটলাম। কিন্তু দুপুরবেলা—কেউ নামাজে, কেউ লাঞ্চে। অথচ আমার মেয়েটার কী হবে?

খুব কম সময়ে তিন-চারটা হাসপাতালে গিয়েও কোনো ডাক্তার পাইনি। জনবহুল বাজারের মাঝখানেও আমি মেয়েটাকে কোলে নিয়ে শুধু ডাকছিলাম, “মা মা, একটু এদিকে তাকাও, একটু কথা বলো। বাবা তোকে নিয়ে ঘুরতে যাবো। সকালবেলা তোকে নিয়ে হাঁটতে বের হবো, তোর জন্য সবকিছু আনবো। তুই একটু বাবার দিকে তাকাও।”

আমার ডায়াবেটিস আছে, তাই সাধারণত আমি ১৫-২০ মিনিটের বেশি আমার মেয়েকে কোলে রাখলে হাত-পা ব্যথা করে। কিন্তু সেদিন… আমি বুঝেছি ‘বাবা’ আসলে কাকে বলে। আমি সেদিন প্রায় দুই ঘণ্টা আমার মেয়েকে এক হাতে নিয়ে সারা শহর হেঁটেছি—একটুও কষ্ট লাগেনি। এটাই তো বাবা!

ইদানীং কোথাও ঘুরতে গেলে যদি কোনো বিপদ বা দুর্ঘটনার সম্মুখীন হই, তখন আর নিজের জন্য চিন্তা করি না। ভাবি—একদিন তো মরেই যাবো। কিন্তু আমার সন্তানদুটো? ওরা কী করবে? কাকে বাবা ডাকবে? ওদের কী হবে? এসব ভেবে চোখে নিজের অজান্তেই জল চলে আসে। এটাই তো বাবা।

সন্তানের মা যখন ফোন দিয়ে বলে “দুধ লাগবে, ডিম লাগবে, কলা লাগবে”—তখন টাকা আছে কি নেই, সেটা না ভেবে দ্রুত সব কিনে ফেলি। কোনো চিন্তা করি না, কত দাম, আজ না কিনলে চলবে কি না। অথচ নিজের বেলায় বা অন্যদের বেলায় কিন্তু অনেক হিসেব করি। আমি যেন অনেকটাই ‘মৃতব্যয়ী’ হয়ে গেছি, যখন থেকে বাবা হয়েছি।

‘বাবা’ শব্দটার ভার সবাই নিতে পারে না। পত্র-পত্রিকায় যখন দেখি—কোনো বাবা মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, কিংবা মেয়েকে মেরে ফেলেছে—তখন মাথায় রক্ত উঠে যায়। মেনে নিতে কষ্ট হয়। বাবা কেন এমন হবে? সন্তানরাই বা কেন বাবার সঙ্গে এমন আচরণ করবে? মানুষের মধ্যে এখনও পশুত্ব বিরাজ করছে।

আল্লাহ পৃথিবীর সব বাবাকে ভালো রাখুন এবং সবাইকে যেন একজন সঠিক, দায়িত্ববান বাবা হিসেবে গড়ে ওঠার তৌফিক দেন। বাবা দিবসের এই দিনে পৃথিবীর সব বাবাকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।

মুমু ২

×