
ছবি: সংগৃহীত
প্রতিদিন লক্ষাধিক অনলাইন অ্যাকাউন্ট হ্যাক হচ্ছে, আর ভাবলে ভুল করবেন—আপনারটা এর ব্যতিক্রম নয়। অনেকে মনে করেন ছোট অ্যাকাউন্টগুলোই বেশি হ্যাক হয়, কিন্তু বাস্তবে হ্যাকারদের লক্ষ্য সব ধরনের অ্যাকাউন্টই। একবার যদি তারা আপনার অ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারে, তাহলে তারা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে এমনকি ব্যাংক অ্যাকাউন্টও ফাঁকা করে দিতে পারে। কেউই ১০০% নিরাপদ নয়!
তবে চিন্তার কিছু নেই—আপনি চাইলে এসব বিপদ এড়াতে পারেন। হ্যাক হওয়া হচ্ছে অ্যাকাউন্ট হারানোর সবচেয়ে বড় কারণ। এই লেখায় জানানো হলো কীভাবে আপনি আপনার অ্যাকাউন্টকে হ্যাকারদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন।
১. শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন
প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—আপনার পাসওয়ার্ড যেন জটিল ও কঠিন হয়। নিজের জন্মদিন বা সহজ কোনো সংখ্যা দিয়ে পাসওয়ার্ড বানানো খুব সহজ, কিন্তু এটিই সবচেয়ে বিপজ্জনক কাজ। হ্যাকাররা এসব সাধারণ তথ্য সহজেই অনুমান করে ফেলে।
সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনার পাসওয়ার্ড বড় হয় এবং সেখানে বড় হাতের অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা ও বিশেষ চিহ্ন থাকে। মনে রাখতে সমস্যা হলে একটি কাগজে লিখে তা নিরাপদ জায়গায় রেখে দিন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—প্রতিটি ওয়েবসাইট বা অ্যাপে ভিন্ন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা। ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রামের পাসওয়ার্ড যেন এক না হয়। চাইলে আপনি একটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করতে পারেন সবগুলো পাসওয়ার্ড নিরাপদে সংরক্ষণের জন্য।
২. নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন
শুধু শক্তিশালী পাসওয়ার্ড থাকলেই হবে না, সেটি মাঝে মাঝে পরিবর্তন করাও জরুরি। আপনি যতই সতর্ক থাকুন না কেন, কোনো ওয়েবসাইট হ্যাক হয়ে গেলে আপনার পাসওয়ার্ডও চলে যেতে পারে। তাই প্রতি কয়েক মাস পরপর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন। এটি আপনার অ্যাকাউন্টকে আরও সুরক্ষিত রাখবে।
৩. ব্যবহার শেষে সবকিছু থেকে লগআউট করুন
যদি আপনি কোনো পাবলিক নেটওয়ার্ক বা নিরাপদ নয় এমন ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাহলে প্রতিবার ব্যবহার শেষে অ্যাকাউন্ট থেকে লগআউট করুন। এমনকি বাসায় থাকলেও মাঝে মাঝে লগআউট করা ভালো। এতে কেউ আপনার ডিভাইসের মাধ্যমে সহজে প্রবেশ করতে পারবে না।
৪. টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করুন
বর্তমানে প্রায় সব প্ল্যাটফর্মেই দুই স্তরের নিরাপত্তা (Two-Factor Authentication) সুবিধা আছে। এতে আপনার অ্যাকাউন্টে কেউ ঢুকতে চাইলে শুধু পাসওয়ার্ড দিলেই চলবে না—সঙ্গে আপনার ফোন বা ইমেইলের মাধ্যমে একটি কোড নিশ্চিত করতে হবে। এটি আপনার নিরাপত্তা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
৫. সন্দেহজনক কোনো লিংকে ক্লিক করবেন না
কখনো কখনো হ্যাক হওয়া বা স্প্যাম অ্যাকাউন্ট থেকে আপনার কাছে হঠাৎ করে অজানা লিংক পাঠানো হতে পারে। এসব লিংকে কোনোভাবেই ক্লিক করবেন না! এসব লিংকেই ফিশিং ট্র্যাপ লুকিয়ে থাকে, যা আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে ব্যবহৃত হতে পারে। সন্দেহজনক অ্যাকাউন্ট ব্লক করুন এবং রিপোর্ট করুন।
৬. সন্দেহজনক ইমেইল এড়িয়ে চলুন
হ্যাকাররা অনেক সময় ইমেইলের মাধ্যমেও আপনার কাছে পৌঁছাতে পারে। কিছু স্ক্যাম সহজেই চেনা যায় (যেমন: 'নাইজেরিয়ান প্রিন্স'), কিন্তু কিছু ইমেইল দেখতে একদম অফিসিয়াল মনে হতে পারে—যেমন কোনো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে এসেছে এমন ইমেইল।
তবে খেয়াল করলে দেখা যাবে, এসব ইমেইলে বানান ভুল বা অস্বাভাবিক লিংক থাকে। সাধারণত এসব ইমেইলে ভয় দেখিয়ে বলা হয়, "আপনার অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাবে যদি লগইন না করেন।" নিশ্চিত না হলে ওই ওয়েবসাইটের অফিসিয়াল হেল্প ফর্মে যোগাযোগ করুন।
৭. নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট করুন
আপনার কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনের সফটওয়্যার আপডেট করা বিরক্তিকর মনে হলেও, এটি অত্যন্ত জরুরি। কারণ, সফটওয়্যারে থাকা ছোট ছোট দুর্বলতা (বাগ) হ্যাকাররা ব্যবহার করে অ্যাকাউন্টে ঢুকে যেতে পারে। তাই নিয়মিত সব অ্যাপ ও অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করে রাখুন। চাইলে আপনি অটো-আপডেট সেট করতে পারেন রাতে ঘুমানোর সময়ের জন্য।
৮. নিরাপত্তা সফটওয়্যার ব্যবহার করুন
বাজারে অনেক অ্যাপ ও ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলো আপনার অ্যাকাউন্ট সুরক্ষায় সাহায্য করে। তাদের মধ্যে একটি হলো Spikerz, যেটি হ্যাক প্রতিরোধে বিশেষ সুবিধা দিয়ে থাকে। তারা আপনার অ্যাকাউন্টকে আরও নিরাপদ করতে প্রয়োজনীয় টুলস দিয়ে সহায়তা করতে পারে। বিস্তারিত জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
সবার অ্যাকাউন্টই হ্যাক হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। তবে কিছু ছোট ছোট সচেতনতা ও নিয়ম মেনে চললে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন, সন্দেহজনক লিংক বা ইমেইল থেকে দূরে থাকুন এবং সর্বশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানুন। যত বেশি আপনি সচেতন থাকবেন, তত বেশি সুরক্ষিত থাকবে আপনার ডিজিটাল জীবন।
আবির