
ছবি: সংগৃহীত
বাবা মানে রোদে ছাতা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছায়া, কান্নায় শান্তির হাত, ক্লান্তির দিনে শক্ত কাঁধ।তিনি মুখে বলেন না, ভালোবাসি—তবু তার প্রতিটি নিঃশ্বাসে সেই ভালোবাসাই মিশে থাকে। সন্তানের একফোঁটা হাসিই যেখানে তার সব ত্যাগের প্রতিদান।আন্তর্জাতিক বাবা দিবস, জুন মাসের তৃতীয় রবিবার উপলক্ষে শ্রদ্ধা সেই মানুষটির প্রতি—যিনি নিজে অন্ধকারে থেকেও আমাদের পথ দেখিয়ে যান আলোয়। দিবসটিতে নিজের বাবাকে স্মরণে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরেছেন -তানজিল কাজী
বাবা দিবসে হৃদয়ের শ্রদ্ধাঞ্জলি
গ্রীষ্মের তীব্র রোদ, আষাঢ়ের ঝুমবৃষ্টি কিংবা মাঘের কনকনে শীত—কোনোটাই বাবাদের থামায় না। তবে তারা যে থামে না, তা নয়। বাবারা থেমে যান সন্তানের মায়ায়, ভালোবাসায়, আর তাদের সুস্থতায়।
আমি যখন এসি রুমে ক্লাস করি, বাবা তখনো মাঠে—ঘামে ভেজা শরীরে ফসলের পাশে। নতুন কোনো জায়গায় “বাবা কী করেন” জানতে চাওয়া হলে আমি গর্ব করে বলি, “কৃষিকাজ করেন।” কারণ আমার জীবনের ভিত তো গড়া হয়েছে বাবার মাটিচাষ, রোদ-বৃষ্টি আর ঘামের বিনিময়ে। সেটা বলতে লজ্জা কিসের?
বাবার ভালোবাসার জন্য কোনো নির্দিষ্ট দিনের প্রয়োজন নেই, তবে বাবা দিবস—এটি পৃথিবীর সব বাবাদের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা জানানোর দিন।
শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা সেই সব বাবাদের, যাঁরা নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় আগলে রেখেছেন সন্তানদের।ভালো থাকুক পৃথিবীর সব বাবা, ভালো কাটুক তাঁদের শেষ বয়সটুকু।
এস.এম.জালাল উদ্দীন
শিক্ষার্থী-এমবিবিস,ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজ, ফরিদপুর
বাবা: এক নিঃশব্দ যুদ্ধের নাম
‘বাবা’—শুধুই দুটি অক্ষর নয়, একটি বোধ, এক নির্ভরতার প্রতীক। এই শব্দের প্রকৃত মর্ম কেবল সেই সন্তানেরাই বোঝে, যাদের জীবনে বাবা আজ শুধুই স্মৃতি।
যিনি দিনের পর দিন নিজের শখকে বিসর্জন দিয়ে সন্তানের প্রতিটি ছোট্ট আবদার পূরণ করেন, তিনিই বাবা। যিনি পরিবারকে বাঁচাতে নিঃশব্দে লড়ে যান প্রতিনিয়ত, ক্লান্তিহীন, অভিযোগহীন।
আজ বাবা দিবসে ছবি খুঁজতে গিয়ে যখন বাবার সাথে একটা ছবিও খুঁজে পেলাম না, তখন ফ্যামিলি পিক থেকেই ক্রপ করতে হলো। একটু কষ্ট নিয়েই ভাবি—সব কথা, সব ভালোবাসা কেন বাবার সামনে বলা হয় না? কেন এই দুরত্ব? সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা—পৃথিবীর প্রতিটি বাবা সুস্থ থাকুক, দীর্ঘজীবী হোন। কারণ, একজন বাবা হারিয়ে গেলে ভরসার আকাশটাও অনেকটা ফাঁকা হয়ে যায়।
মুরাদ সরকার
শিক্ষার্থী-সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট,ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
বাবা: আমার অলিখিত সুপারহিরো
পৃথিবীতে আমার লেখা প্রতিটি আত্মজীবনীর পাদটীকায় জ্বলজ্বল করে লেখা একটি নাম—“বাবা”। আমার জীবনে বাবা বরাবরই সেই বটবৃক্ষ, যার ত্যাগ, তিতিক্ষা আর পরিশ্রমেই আমি আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি। বাবার পরামর্শ, ভালোবাসা আর দোয়া নিয়েই তারই দেখানো স্বপ্নের পথে হাঁটছি এখনো।
আমার নিঃসঙ্গ পথচলায় নিরন্তর কাণ্ডারী হয়ে আছেন তিনি। আঙুলে আঙুল রেখে হাঁটতে শেখা থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি হোঁচটেই আগলে রেখেছেন আমায়। স্বপ্ন দেখিয়েছেন আকাশজোড়া স্বপ্ন জয়ের। শৈশব থেকেই আমার আশা, আকাঙ্ক্ষা, আবদার, অভিমানের একমাত্র আশ্রয় তুমি, বাবা।
বিশাল এই বটবৃক্ষের পাশে আজও আমি নিতান্তই ক্ষুদ্র। জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্তহীনতায় পেয়েছি তোমার সাহচর্য। স্বভাবত মাধুর্যতায়, অপার মমতায় সবসময় জড়িয়ে রাখো তুমি।
আজকাল তোমার থেকে অনেকটা দূরে থাকি, বাবা। নিয়ম করে আড্ডা হয় না, একসাথে হেসে ওঠা হয় না দায়িত্ব আর গণ্ডির বেড়াজালে। ক্যাম্পাস জীবনের চাপ যখন আমাকে ভেঙে দেয়, তখন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে—আমার বেস্টফ্রেন্ড তুমি, বাবা! তোমাকেই আমি পৃথিবীর সমস্ত কিছুর বিনিময়ে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি।
সামিহা সিরাজী লাজ
শিক্ষার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
রাগের আড়ালে মমতার পাহারা
বাবা—শুধু একটি শব্দ নয়, এক অদ্ভুত অনুভব, এক বিশাল আশ্রয়ের নাম। আমার বাবা একটু রাগী, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, আমি সামনে থাকলেই সে রাগ কোথায় যেন মিলিয়ে যায়। আমি হয়তো তার শান্তির ছায়া, আর তিনি আমার ভালোবাসায় ভরা এক পৃথিবী।
শৈশবের প্রতিটি আনন্দে, প্রতিটি সোনালি স্মৃতিতে বাবার স্পর্শ লেগে আছে—কাঁধে চড়ে ঘোরা, হাত ধরে হাঁটা শেখা। মা না-থাকার এই এক দেড় বছরে, বাবা আমাদের দুই ভাইবোনকে আগলে রেখেছেন নিঃশব্দ ভালোবাসায়। কখনো দুর্বল হননি আমাদের সামনে—বরং হয়েছেন পাহাড়ের মতো শক্ত, সাহসের প্রতীক।
বাবা কখনো মুখে ভালোবাসি বলেন না, কিন্তু প্রতিটি কাজে সেই ভালোবাসা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রাগী স্বভাবের আড়ালে লুকিয়ে থাকা তার অসীম মমতা আর দায়িত্ববোধ আজও আমাকে আবেগে ভাসায়।
বাবা, তুমি আমার বটবৃক্ষ, আমার নির্ভরতার নাম। বাবা দিবসে শুধু বলি—তোমাকে খুব ভালোবাসি।
কাজী সানজিদা শীতল
শিক্ষার্থী-মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট,সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ,ফরিদপুর
ফারুক