ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

মূল ফাইল হারিয়ে ‘ঝুলে আছে’ ইবি ক্লাবের দেড় বছরের ভাড়া

ইবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ১৫ জুন ২০২৫

মূল ফাইল হারিয়ে ‘ঝুলে আছে’ ইবি ক্লাবের দেড় বছরের ভাড়া

ছ‌বি: জনকণ্ঠ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ফাইল হারিয়ে যাওয়ার কারণে কুষ্টিয়াস্থ ইবি ক্লাবের ভাড়া পরিশোধ করা যাচ্ছে না। গত ৫ মাসে তিন দফায় চিঠি পাঠিয়েও কোনো সমাধান পাননি ভবনটির মালিক। অভিযোগ অনুযায়ী, গত ২০ মাস ধরে ভবনটির ভাড়া দেওয়া হয়নি। চুক্তি অনুসারে এ সময়ে মোট ভাড়া দাঁড়ায় ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা (প্রতি মাসে ৩৬ হাজার টাকা হারে)।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফাইল হারানোর খবরে মালিকপক্ষ বিস্মিত হয়েছেন। পরে গণমাধ্যমকর্মীরা বিষয়টি অনুসন্ধানে গেলে এস্টেট দপ্তরে বর্তমান ও সাবেক প্রধান একে অপরকে দায়ী করেন।

মালিকপক্ষ জানায়, ২০২২ সালে চুক্তি নবায়নের পর সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসের ভাড়া একসঙ্গে পরিশোধ করে কর্তৃপক্ষ। এরপর আর কোনো ভাড়া দেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, এস্টেট অফিস থেকে ভাড়ার মূল চুক্তিপত্রের ফাইলটি হারিয়ে যাওয়ায় জটিলতার সৃষ্টি হয়। পরে মালিকের পাঠানো চিঠির ভিত্তিতে তাদের কাছ থেকে চুক্তির ফটোকপি সংগ্রহ করে এস্টেট অফিস। ফটোকপি ও চিঠি সংযুক্ত করে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বকেয়া পরিশোধের অনুমোদনের জন্য একটি পার্ট ফাইল অর্থ ও হিসাব শাখায় পাঠানো হয়। কিন্তু মূল ফাইল না থাকায় অনুমোদন দেওয়া হয়নি। ফলে প্রায় চার মাস ধরে বিষয়টি থমকে আছে। এ সময়ের মধ্যে কোনো দপ্তর থেকেই ফাইল উদ্ধারে কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। সর্বশেষ গত ৫ মে মালিকপক্ষ তৃতীয় দফায় চিঠি দেওয়ার পর, ফটোকপির মাধ্যমে তৈরি পার্ট ফাইলটি খুঁজে বের করতেও কয়েকদিন সময় লেগেছে।

এস্টেট অফিসের বর্তমান প্রধান আলাউদ্দিন বলেন, "মূল ফাইল না থাকায় মালিকপক্ষ থেকে কাগজপত্রের ফটোকপি নিয়ে নতুন ফাইল তৈরি করে হিসাব শাখায় পাঠিয়েছিলাম। তবে মূল ফাইল না থাকায় কিছুটা জটিলতা হয়েছে। মাঝখানে ওই ফাইলটিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেছি ৫ আগস্টের পর। তার আগেই ফাইলটি হারিয়ে গেছে।"

তবে সাবেক এস্টেট প্রধান শামসুল ইসলাম দায় অস্বীকার করে বলেন, "ফাইল থাকার কথা, হারিয়ে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আগে নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ হতো, কোনো সমস্যা ছিল না। এখন গায়ের জোরে কিছু বলা মানেই সত্যি হয়ে যায় না। তারা তো আমার কাছ থেকে বুঝে নেয়নি।"

অর্থ ও হিসাব শাখার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আনার পাশা বলেন, "মূল ফাইল না থাকলে পূর্বের পেমেন্ট যাচাই করা সম্ভব নয়। চুক্তির ফটোকপি গ্রহণযোগ্য নয়। তাই বিল অনুমোদন হয়নি। এসব জটিলতার কারণেই ফাইলটি পড়ে ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঈদের ছুটির পর অফিস খুললেই বকেয়া পরিশোধের ব্যবস্থা করা হবে।"

তিনি আরও বলেন, "২০২২ সাল থেকে ইউজিসি ক্লাব ভাড়ার জন্য নির্দিষ্ট বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়ায় বিকল্প খাত থেকে অর্থ ম্যানেজ করতে হচ্ছে। এদিকে এস্টেট অফিস গাফিলতি করে নিয়মিত মাসিক বিল না দিয়ে একসঙ্গে অনেক বিল জমা দেয়, এতে সমস্যা আরও জটিল হয়। এস্টেট অফিসের উচিত মাসে মাসে বিল জমা দেওয়া।"

ক্লাব ভবনের মালিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তিন দফায় চিঠি দিয়েছি, কিন্তু কোনো উত্তর পাইনি। কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সূত্র আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, মূল ফাইল হারিয়ে গেছে। আমি জানতে চাই— একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো মূল ফাইল কীভাবে হারায়!"

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, "জটিলতা সমাধান করে দ্রুত বকেয়া ভাড়া পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছি। পাশাপাশি গাফিলতির বিষয়েও সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করা হয়েছে।"

এম.কে.

×