
ছবিঃ সংগৃহীত
অন্যের জমি অন্যায়ভাবে দখলের উদ্দেশ্যে প্রতিনিয়তই ঘটছে দলিল জালিয়াতির ঘটনা। এতে প্রকৃত মালিক যেমন হয়রানির শিকার হন, তেমনি হারাতে পারেন তাঁর আইনসম্মত মালিকানাও। তাই জমির মালিকদের জাল দলিল থেকে সতর্ক থাকা এবং প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আজকের প্রতিবেদনটি জানাবে কীভাবে চিনবেন জাল দলিল, এবং কিভাবে বাতিল করবেন তা।
কিভাবে হয় দলিল জালিয়াতি?
জালিয়াতরা সাধারণত মূল দলিলের কপি করে তা ঘষামাজা, ওভাররাইটিং বা কাটাছেঁড়া করে তৈরি করে থাকে জাল দলিল। দাতা বা গ্রহীতার নাম, দাগ নম্বর, খতিয়ান নম্বর, এমনকি জমির সীমানা পর্যন্ত পাল্টে ফেলা হয়। অনেকে আবার সরকারি অফিসের সিল ও সাব-রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরও নকল করে থাকেন।
বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমনভাবে দলিল বানানো হয় যাতে সাধারণ চোখে তা আসল বলেই মনে হয়। এ কারণে অনেক সময় প্রকৃত মালিকও বুঝতে পারেন না যে তাঁর জমির দলিল জাল করা হয়েছে।
কোন কোন পরিস্থিতিতে দলিল জাল হওয়ার ঝুঁকি বেশি?
১. এজমালি সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ: ভাই-বোনদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা না হলে, কেউ একজন অন্যদের অগোচরে দলিল করে নিতে পারেন।
২. অপির্ত বা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি: মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে কিংবা উত্তরাধিকারীদের না জানিয়ে দলিল করা হয়।
৩. প্রতিবেশীর সঙ্গে বিরোধ: জমি সংক্রান্ত পুরনো বিরোধ থাকলে প্রতিপক্ষ জাল দলিল তৈরি করতে পারে।
৪. প্রবাসে অবস্থান: মালিক বিদেশে থাকলে জালিয়াতির সুযোগ বেড়ে যায়।
৫. আদালতের বণ্টননামা না থাকা: আইনগত ভাগ না হলে কেউ নিজের নামে দলিল তৈরি করে নিতে পারে।
কীভাবে চিনবেন জাল দলিল?
দলিল সন্দেহজনক মনে হলে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে আবেদন করে মূল নথির সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে পারেন। দলিল নম্বর, সাল, ক্রমিক নম্বর ও দলিলের প্রকৃতি যাচাই করতে হবে। বিক্রেতার বায়া দলিল এবং সংশ্লিষ্ট সব নথিও যাচাই করা উচিত।
কী করবেন জাল দলিল পেলে?
জাল দলিল সম্পর্কে জানার সঙ্গে সঙ্গেই নিচের আইনি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি:
-
দেওয়ানি মামলা: সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ১৮৭৭-এর আওতায় দলিল বাতিলের জন্য মামলা করতে হবে। আইনের ৪০ ধারা অনুসারে আংশিক দলিল বাতিলও চাওয়া যেতে পারে।
-
ফৌজদারি মামলা: জাল দলিল সৃজনে জড়িতদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪২০, ৪৬৩ থেকে ৪৭৩ ধারায় মামলা করা যাবে।
-
সময়সীমা: তামাদি আইনের ৯১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দলিল জাল সম্পর্কে জানার ৩ বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে।
-
দখলের জন্য মামলা: দলিল বাতিলের পাশাপাশি সম্পত্তির দখল চেয়ে পৃথক মামলা করাও যেতে পারে।
আদালতের রায় কার্যকর হলে কী করবেন?
আদালত দলিল বাতিলের আদেশ দিলে ডিক্রির একটি অনুলিপি সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জমা দিতে হবে। রেজিস্ট্রি অফিস সেই অনুসারে দলিল বাতিলের তথ্য বালাম বহিতে লিপিবদ্ধ করবে।
তবে এ ধরনের মামলায় কোর্ট ফি আইন অনুযায়ী নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে, যা দ্বিতীয় তফসিলের ১৭(৩) অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে।
জমির মালিকানা রক্ষা করতে জাল দলিল শনাক্ত করা এবং সময়মতো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সন্দেহজনক দলিল পেলে অবিলম্বে রেজিস্ট্রি অফিসে যাচাই করা এবং প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হওয়াই হতে পারে একমাত্র নিরাপদ পথ।
আলীম