ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

জমির মালিকানা বাতিলের তিনটি বড় কারণ, সতর্ক না থাকলে হারাতে পারেন নিজের সম্পত্তিও!

প্রকাশিত: ২৩:৫২, ১৪ জুন ২০২৫; আপডেট: ২৩:৫২, ১৪ জুন ২০২৫

জমির মালিকানা বাতিলের তিনটি বড় কারণ, সতর্ক না থাকলে হারাতে পারেন নিজের সম্পত্তিও!

ছবিঃ সংগৃহীত

দেশের বিভিন্ন স্থানে হঠাৎ করেই বহু মানুষের জমির মালিকানা বাতিল হয়ে যাচ্ছে। এমনকি যাদের হাতে বৈধ দলিল, খতিয়ান ও ভোগদখলের ইতিহাস রয়েছে, তারাও হারাচ্ছেন মালিকানা। ভূমি মন্ত্রণালয়ের নতুন পদক্ষেপ এবং “ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন” অনুযায়ী, তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে এসব জমির মালিকানা বাতিল করা হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র।

সরকারি কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, জমির প্রকৃত মালিকানা নির্ধারণ ও জাল দলিল চক্র রোধ করতেই এই কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নিচে তুলে ধরা হলো মালিকানা বাতিলের তিনটি প্রধান কারণ—

১. ওয়ারিশি সম্পত্তিতে বাটোয়ারা দলিল না থাকা
পরিবারের পিতৃপুরুষের রেখে যাওয়া জমিতে ওয়ারিশদের মধ্যে সুষ্ঠু বণ্টনের অভাব সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, এক বা একাধিক ভাই সম্পত্তির বেশি দখল নিয়ে ফেলছে এবং পরে তা নিজেদের নামে নামজারি করে নিচ্ছে—কোনো ধরনের বাটোয়ারা বা বণ্টন দলিল ছাড়াই।

এভাবে ভোগদখল বৈধ না হওয়ায় এখন এসব সম্পত্তির মালিকানা বাতিল হচ্ছে। প্রশাসন জানায়, বাটোয়ারা ছাড়া ভোগদখল করলে তা অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে, এমনকি খতিয়ান বা নামজারি থাকলেও।

২. জাল দলিলের মাধ্যমে ক্রয়কৃত জমি
অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে এমন জমি ভোগদখল করছেন যেগুলো জাল দলিল বা ভুয়া মালিকের মাধ্যমে কেনা হয়েছে। পরবর্তীতে দেখা যাচ্ছে, প্রকৃত মালিক ছিলেন অন্য কেউ। ফলে যারা এই জাল বা অবৈধ প্রক্রিয়ায় জমি কিনেছেন, তাদের মালিকানা বাতিল করা হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে ভোগদখল বৈধ হলেও, মালিকানা আইনি স্বীকৃতি পাচ্ছে না।

উল্লেখ্য, প্রশাসন বলছে—ক্রয়ের আগে জমির প্রকৃত মালিকানা যাচাই না করলে এমন দুর্ভোগের মুখে পড়া অস্বাভাবিক নয়।

৩. সরকারি বা খাস খতিয়ানভুক্ত জমি ভোগ দখল
সবচেয়ে জটিল ও সংবেদনশীল ইস্যুটি হলো সরকারি খাস জমি। বহু মানুষ সরকারি বা রাষ্ট্রীয় সংস্থার জমিতে দীর্ঘমেয়াদি লিজ নিয়ে বসবাস করতেন কিংবা ব্যবসা করতেন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, লিজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, কিংবা লিজ না থাকলেও তারা মালিকানার দাবি করছেন।

এসব ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে—খাস জমি বা সরকারি জমির স্থায়ী মালিকানা কারও হতে পারে না। লিজ থাকলে মেয়াদ শেষ হলে জমি ফেরত দিতে হবে, না হলে তা অবৈধ দখল হিসেবে বিবেচিত হবে।

ফলাফল ও সরকারী নির্দেশনা
এই তিন ধরনের ক্ষেত্রে মালিকানা ও ভোগদখল অবৈধ ঘোষিত হচ্ছে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে ডিসি অফিস ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে জমির পুনঃবণ্টনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে—ভবিষ্যতে এমন জমি কেনার আগে সম্পূর্ণ আইনি যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনক্রমেই চুক্তিতে যাওয়া যাবে না।

ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন অনুসারে, এখন থেকে জমি সংক্রান্ত জালিয়াতি বা অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে প্রশাসন সকল নাগরিককে আরও সচেতন ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।

সতর্কবার্তা
যদি আপনার জমি ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া হয়ে থাকে এবং এখনও বাটোয়ারা দলিল না করে থাকেন, তাহলে এখনই বণ্টন সংক্রান্ত দলিল সম্পন্ন করে রাখুন। জমি কেনার ক্ষেত্রে যাচাই করুন খতিয়ান, দাগ নম্বর, দখল এবং মালিকানা ইতিহাস।
 

মারিয়া

×