ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

ইউরোপের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে ইরানের সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ১১:০৮, ১৫ জুন ২০২৫; আপডেট: ১১:২৫, ১৫ জুন ২০২৫

ইউরোপের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে ইরানের সিদ্ধান্ত

তীব্র উত্তেজনার মধ্যে ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধের কথা "চিন্তাভাবনায় রেখেছে" বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির অভিজাত সামরিক বাহিনী রেভল্যুশনারি গার্ডের কমান্ডার এবং সংসদ সদস্য সারদার এসমাইল কোওসারি। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “শত্রুকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের হাতে অনেক বিকল্প আছে। সেনা হামলা ছিল আমাদের প্রতিক্রিয়ার কেবল একটি অংশ মাত্র।”

হরমুজ প্রণালী বিশ্বে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক চেকপয়েন্ট। প্রতিদিন যে পরিমাণ তেল ও গ্যাস এই পথ দিয়ে পরিবাহিত হয়, তা বন্ধ হয়ে গেলে গোটা বিশ্ববাজারে তেলের দাম হঠাৎ আকাশছোঁয়া হয়ে উঠতে পারে। ইউরোপের জন্য এই প্রণালী বন্ধ হওয়া হবে ভয়াবহ একটি পরিস্থিতি—বলছেন বিশ্লেষকরা।

এই প্রণালী দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১৮ থেকে ২০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল পরিবাহিত হয়। অর্থাৎ বিশ্বের মোট তেলের প্রায় ২০ শতাংশ হরমুজ প্রণালী দিয়ে যায়। এই অঞ্চলের জন্য কোনো সহজ বিকল্প রুট নেই— বিশেষ করে সৌদি আরব, কুয়েত ও অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোর জন্য। যদি হরমুজ প্রণালী দিয়ে তেল পরিবহন অর্ধেকে নেমে আসে, তাহলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১২০ মার্কিন ডলার বা তারও বেশি হতে পারে। আর দাম বৃদ্ধির এই প্রভাব বিশ্বজুড়ে সব দেশের ওপরই দ্রুত পড়বে।

কী কী বিপদ ডেকে আনতে পারে ইউরোপের জন্য:

জ্বালানি নিরাপত্তার হুমকি

বিশ্বের মোট তেলের প্রায় ২০% এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস হরমুজ প্রণালী দিয়ে পার হয়। ইউরোপীয় দেশগুলো সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বিপুল পরিমাণে তেল ও LNG আমদানি করে, যা এই প্রণালীর উপর নির্ভরশীল। প্রণালী বন্ধ হয়ে গেলে ইউরোপে জ্বালানি ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

অর্থনৈতিক ধাক্কা

তেলের দাম হঠাৎ বেড়ে গেলে ইউরোপজুড়ে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে। শিল্পকারখানা, কৃষি এবং পরিবহন খাতে খরচ বেড়ে যাবে। ইউরোপীয় শেয়ারবাজারে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে।

 সামরিক উত্তেজনা ও সংঘাতের ঝুঁকি

হরমুজ প্রণালী অবরোধ হলে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর নৌবাহিনীর সঙ্গে ইরানের সংঘর্ষ বাধতে পারে। ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মত দেশগুলোর এই এলাকায় নৌঘাঁটি ও জাহাজ থাকায়, ইউরোপ ন্যাটোর মাধ্যমে সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে।

বাণিজ্য ও পণ্য পরিবহনে ব্যাঘাত

শুধু জ্বালানি নয়, হরমুজ প্রণালী দিয়ে নানা ধরনের কাঁচামাল, ইলেকট্রনিক্স, ও ভোক্তা পণ্য ইউরোপে আসে। প্রণালী বন্ধ হলে এসব পণ্যের সরবরাহে বিলম্ব ঘটবে। জাহাজ পরিবহনের বীমা খরচ বেড়ে যেতে পারে, যার প্রভাব পড়বে ব্যবসা ও ভোক্তাদের ওপর।

অতিরিক্ত হুমকি: সাইবার ও ড্রোন হামলা

ইরানের শর্ট ও মিডিয়াম রেঞ্জ ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং সাইবার হামলার সক্ষমতা রয়েছে। তারা আগেও সৌদি আরবের তেল স্থাপনাগুলোতে সাইবার আক্রমণ চালিয়েছে (২০১২)। শাহেদ ড্রোনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট জাহাজ, নৌপথ কিংবা বন্দর অবকাঠামোতে হামলা চালানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের আশঙ্কা

ইউরোপজুড়ে সন্ত্রাসী হামলার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ইউরোনিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ক্লোদ মনিকয়ে জানান, ইরান ইউরোপের মূল ভূখণ্ডে হামলার পথেও হাঁটতে পারে।

সানজানা

×