
শনিবার ভোরবেলায় ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার পর চরম আতঙ্ক আর হতাশার চিত্র উঠে এসেছে ইসরায়েলের রিশন লেজিওন শহরে। “হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে আছে,” বললেন এক বাসিন্দা, যিনি নিজের ধ্বংসপ্রাপ্ত শৈশবের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
ভোর পাঁচটার কিছু পরে, ইরান ছয় দফা হামলা চালায় ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে—যার প্রতিক্রিয়ায় সাধারণ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটতে দেখা যায়। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই হামলা ছিল তাদের নিজস্ব ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এর জবাবে, যেখানে ইসরায়েল একাধিক ইরানি শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীকে লক্ষ্য করে অভিযান চালায়।
রিশন লেজিওনে একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার ফলে ২ জন নিহত হন। নিহতদের একজন ছিলেন ৭৩ বছর বয়সী ইসরায়েল আলোনি। আহত হয়েছেন প্রায় ১৯ জন।
স্থানীয় বাসিন্দা ইফাত বেনহাইম জানান, “সাইরেন বাজতেই আমরা সবাই বেজমেন্টে ছুটে যাই। হঠাৎ এমন এক বিকট বিস্ফোরণ হলো, মনে হলো পুরো বাড়িটাই মাথার উপর ধসে পড়ল।”
মিনিট খানেক পরে বাইরে বেরিয়ে তারা দেখতে পান, জানালার কাঁচ চূর্ণ-বিচূর্ণ, ঘরজুড়ে ধুলা ও ধ্বংসাবশেষ। রিশন লেজিওনের শান্ত একটি আবাসিক এলাকায় একাধিক বাড়ির ছাদ ভেঙে পড়েছে, রাস্তায় ছড়িয়ে কাচের টুকরো, প্রায় ৩০টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত।
ইফাত ও তার স্বামী সিয়ন গত ২৯ বছর ধরে এই বাড়িতে বাস করছেন। এখন তারা ঘরের ভাঙা জিনিসপত্র গোছাচ্ছেন—এবং ভাবছেন সামনের দিনগুলো কোথায় কাটাবেন।
আরেক বাসিন্দা, যিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি, জানালেন যে সেদিন রাতে তিনি তার মেয়ের বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন—আর সেটিই হয়তো তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
৪৮ বছর বয়সী স্যালি ইলান তাঁর পিতামাতার ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, “এই মহল্লায় প্রথম এই বাড়িটিই তৈরি হয়েছিল। আমার বাবা খুব আগ্রহ নিয়ে এটি তৈরি করেছিলেন।”
তিনি কাঁপা কণ্ঠে যোগ করেন, “৪০ বছরের স্মৃতি চলে গেল… মনে হচ্ছে বুকটা ভারী হয়ে গেছে।”
ইসরায়েলের পুরো দেশে রাতভর হামলায় ৩ জন নিহত ও ৭৬ জন আহত হয়েছেন। তবে ইসরায়েলি এলাকাগুলোর ধ্বংসযজ্ঞ এখনো ইরানে চালানো হামলার তুলনায় কমই বলা যায়।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এর অংশ হিসেবে ইরানিদের পরমাণু স্থাপনা, ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, সামরিক ঘাঁটি, এমনকি একটি বিমানবন্দরেও হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০০ জন আহত হয়েছেন এবং ৭৮ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানী তেহরানে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে ইসরায়েলি হামলায় ২০ শিশুসহ ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন।
রিশন লেজিওনের এক বাসিন্দা ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির ধুলোঢাকা জানালায় লিখে রেখেছেন—“Until when?”
মাত্র ৪৮ ঘণ্টা পুরনো এই সংঘাত ঘিরে আজ সেই প্রশ্নই যেন ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে।
Jahan