ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

ফুলবাড়ীতে ল্যাম্পি স্কিন রোগে গরুর মৃত্যু, ভাঙছে কৃষকের স্বপ্ন

মাহফুজার রহমান মাহফুজ, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ১৯:০৩, ১৫ জুন ২০২৫

ফুলবাড়ীতে ল্যাম্পি স্কিন রোগে গরুর মৃত্যু, ভাঙছে কৃষকের স্বপ্ন

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ।

দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা উপজেলা ফুলবাড়ী। এ উপজেলার অধিকাংশ মানুষের জীবন-জীবিকা কৃষি নির্ভর। জমিতে ফসল চাষাবাদের পাশাপাশি অনেক  কৃষক বাড়িতে গবাদিপশু পালন করেন। এতে সংসারে সচ্ছলতার আশা করেন কৃষকরা। কিন্তু এবারে তাদের আশা হতাশায় রূপ নিয়েছে। ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজে (এলএসডি) আক্রান্ত হয়েছে কৃষকের গরু। রোগের প্রাদুর্ভাবে মরছে গরু, কাঁদছে কৃষক। 

উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরের তথ্য মতে, উপজেলায় গরুর সংখ্যা ৬৭ হাজার। মহিষ রয়েছে ৩৯৮ টি। উপজেলার সর্বত্র ল্যাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই গড়ে চার থেকে পাঁচজন গরু মালিক রোগাক্রান্ত গরু নিয়ে পশু হাসপাতালে আসছেন। তবে উপজেলায় কি পরিমাণ গরু এ রোগে আক্রান্ত এবং এখন পর্যন্ত কতটি গরু মারা গেছে তার নির্দিষ্ট কোন তথ্য মেলেনি উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় কৃষকের বাড়িতে গরু ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত। এ রোগের কবল থেকে গরু বাঁচাতে অনেকেই স্থানীয় কবিরাজ ও হাতুড়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। প্রান্তিক কৃষকরা জানিয়েছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে এ রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। রোগাক্রান্ত গরু মারা যাচ্ছে। আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা চললেও দ্রুতই স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে। আর এ রোগের চিকিৎসা চলমান রাখতে খরচ হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।

ঘোগারকুটি গ্রামের কৃষক মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, “ঈদের আগে আমার গরুর ল্যাম্পি স্কিন দেখা দেয়। স্থানীয় পশু ডাক্তার ডেকে চিকিৎসা নিচ্ছি। এখন পর্যন্ত চিকিৎসায় তিন হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। তারপরও খুব একটা উন্নতি দেখ স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে। এদিকে আশপাশে অনেকের গরু মারা যাচ্ছে। আমার এলাকার নজরুল ইসলাম ১টি ফখরুদ্দিন মাস্টারের ১টি আবুল হোসেন ১টি গরু মারা গেছে। কমবেশি সবার গরু আক্রান্ত। আমার গরুটি নিয়ে আতঙ্কে আছি।” 

একই এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, তার চারটি গরুর মধ্যে দুইটি গরু রোগাক্রান্ত। স্থানীয় পশু ডাক্তারের চিকিৎসা নিয়েও গরুর তেমন একটা উন্নতি হয়নি। এখন তিনি কবিরাজের শরণাপন্ন হয়েছেন। 

উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের কৃষানি হাছনা বেগম বলেন, “আমার মোট চারটি গরু। সপ্তাহ খানেক আগে একটি গরুর গায়ে ফোসকা দেখা দেয়। অ্যালার্জি হয়েছে ভেবে ডাক্তার ডাকিনী। পরে গরুর মুখে ঘা হয়, পা ফুলে যায়। অবস্থা খারাপ হলে গ্রাম্য ডাক্তার ডাকি। ডাক্তার এসে দেখে বলে এ রোগের নাম ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ। গরুটির চিকিৎসায় পাঁচ হাজার টাকা খরচ করি। তাতেও কোন কাজ হয়নি গরুটি মরেছে। বাকি গরুগুলো নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছি।”

শাহ বাজার এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, তার পাঁচটি গরুর মধ্যে একটি বাছুর গরু ল্যাম্পি আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। ওনার প্রতিবেশী আরও দুই জনের দুটি বাছুর গরু মরেছে। তিনি আরও জানান, গরমের আগে তিনি চারটি গরুকে ভ্যাকসিন দিয়েছেন। এরপর থেকে গরুগুলো এখন পর্যন্ত সুস্থ আছে। ল্যাম্পি প্রতিরোধে সবাই যদি গরুকে ভ্যাকসিন দিত তাহলে এ রোগ এতো ছড়াতো না।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরিফুর রহমান কনক জানান, উপজেলায় খামারিদের তুলনায় প্রান্তিক কৃষকদের গরু ল্যাম্পি স্কিন রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। রোগাক্রান্ত পশুর সুচিকিৎসায় কালক্ষেপণ ও একেবারে চরম পর্যায়ে চিকিৎসা নিতে আসায় পশু মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এজন্য মাঠ পর্যায়ে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে কৃষকদের সচেতন করা হচ্ছে। গরুর সুচিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরে দ্রুত যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

মিরাজ খান

×