
ছবি: সংগৃহীত
আজ ১৫ই জুন, বাবা দিবস। আমাদের জীবনে এক নিরব ছায়ার নাম বাবা। এই মানুষটি নিজের সব চাওয়া-পাওয়া ভুলে দিনের পর দিন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে একটি মাত্র স্বপ্ন আঁকেন—সন্তান যেন নিজের চেয়ে ভালো থাকে, মাথা উঁচু করে বাঁচে। তার পেশা যতই সাধারণ হোক, সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়তে তিনি হয়ে ওঠেন নিঃশব্দ এক যোদ্ধা। না থাকে বিশ্রাম, না থাকে অভিযোগ—থাকে কেবল দায়িত্ব, আর সীমাহীন ভালোবাসা।
বাবা মানে পরিবারের নীরব অভিভাবক, যিনি বলিষ্ঠ কণ্ঠে সিদ্ধান্ত নেন, ধৈর্য নিয়ে সামলান সব ঝড়। সংসারে তার ভূমিকা অনেকটা দেয়ালের মতো—দৃঢ়, স্থির, নীরব। অথচ আমরা দেয়ালের উপস্থিতি টের পাই কখন? যখন সেটা ভেঙে পড়ে।
ধীরে ধীরে সময় এগোয়। সন্তান বড় হয়। বাবা একটু একটু করে পেছনে সরে যান। বাইরে থেকে ফেরার পথে এখন আর কেউ জিজ্ঞেস করে না, “বাবা, আমার জন্য কিছু আনেননি?”
শরীরে তখন ক্লান্তি চেপে বসে, চোখে জমা হয় না বলা অনেক কথা। ঈদ আসে, ঈদ যায়। সন্তানের জন্য জামা-কাপড় কেনা হয় আগেভাগেই, কিন্তু বাবার পুরনো পাঞ্জাবি নিয়েই কেটে যায় উৎসবের দিন।
এক সময় সন্তান হয়তো দেশের বাইরে, কিংবা শহরের দূরপ্রান্তে ব্যস্ত জীবনে ডুবে যায়। বাবার ফোনটাও তখন আর আগের মতো গুরুত্ব পায় না। অথচ বাবা ফোনটা হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে থাকেন—বারবার স্ক্রিনে তাকান, সন্তানের নামটা ভেসে উঠবে কি না, সেই আশায়।
বাবা তার চোখের জলের কথা কখনো বলেন না। তিনি বুকের ভেতর চেপে রাখেন সব না-পাওয়ার গল্প। যখন সন্তানের সাফল্যের গল্প সবাইকে গর্বভরে বলেন, তখন একটিবারও নিজের কোনো কৃতিত্বের দাবি তোলেন না। বাবা মুখে না বললেও তাঁর প্রতিটি কাজেই লেখা থাকে—"তোমার জন্য সব কিছুই করতে পারি।"
যিনি একসময় নিজের কষ্ট ভুলে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলেন, আজ আমরা কি তাঁর জন্য একটু সহজ পথ তৈরি করতে পারছি?
একবার ফোন করি তাকে। বলি, “বাবা, আমি তোমায় খুব ভালোবাসি।” দেখবেন, ফোনের ওপাশে কিছুক্ষণ নীরবতা থাকবে। তারপর হয়তো ভাঙা গলায় বাবা বলবেন, “তোর হাসিমুখটাই আমার সব পাওয়া, তুই ভালো থাক বাবা”
ফারুক