১ দেশের দখলে বিশ্বের ৬২% হ্রদ—আপনি কি জানেন কোন দেশ?

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি হ্রদের অধিকারী দেশ হিসেবে উঠে এসেছে কানাডার নাম। কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলবিদদের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে আসে। ২০১৬ সালে প্রভাবশালী জার্নাল Nature Communications-এ প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বের মোট ১৪.২ লাখ হ্রদের মধ্যে ৮,৭৯,৮০০টি রয়েছে কানাডাতেই, যা বিশ্বের মোট হ্রদের ৬২ শতাংশ।

গবেষণায় ০.১ বর্গ কিলোমিটারের (১০ হেক্টর বা ১ লক্ষ বর্গমিটার) চেয়ে বড় হ্রদগুলোকে হিসাবের মধ্যে ধরা হয়েছে।

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি হ্রদ রয়েছে এমন শীর্ষ ১০টি দেশ (≥ ০.১ বর্গ কিমি)

১. কানাডা – ৮,৭৯,৮০০
২. রাশিয়া – ২,০১,২০০
৩. যুক্তরাষ্ট্র – ১,০২,৫০০
৪. চীন – ২৩,৮০০
৫. সুইডেন – ২২,৬০০
৬. ব্রাজিল – ২০,৯০০
৭. নরওয়ে – ২০,০০০
৮. আর্জেন্টিনা – ১৩,৬০০
৯. কাজাখস্তান – ১২,৪০০
১০. অস্ট্রেলিয়া – ১১,৪০০

হিমযুগের উপহার এইসব হ্রদ

গবেষণা বলছে, বিশ্বের অধিকাংশ হ্রদ-সমৃদ্ধ অঞ্চল যেমন উত্তর কানাডা, আলাস্কা, স্ক্যান্ডিনেভিয়া, রাশিয়া — এক সময় মোটা বরফে আবৃত ছিল। হিমযুগ শেষে যখন গ্লেসিয়ারগুলো গলে যায়, তখন তারা ভূমিকে কেটে অসংখ্য হ্রদের জন্ম দেয়।

এছাড়া হিমালয়, রকি, এবং আন্দিজ পর্বতমালা সহ উচ্চভূমিগুলোতেও গ্লেসিয়াল প্রক্রিয়া ও ভূকম্পনের কারণে অনেক হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে। আবার, আমাজন নদীর বন্যাভূমি বা চীনের উপকূলীয় নদী অঞ্চলগুলোতেও রয়েছে অসংখ্য হ্রদ।

কেন গুরুত্বপূর্ণ কানাডার হ্রদগুলো?

কানাডার এই বিপুল হ্রদ শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই বাড়ায় না, এটি দেশের জলবায়ু, পানিচক্র, বাস্তুতন্ত্র এবং আবহাওয়ায় বড় ভূমিকা রাখে। তবে গবেষকরা উত্তর কানাডার গ্লেসিয়ার দ্রুত গলে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এতে করে পুরনো অনেক হ্রদ শুকিয়ে যেতে পারে এবং নতুন হ্রদেরও সৃষ্টি হতে পারে, যা পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে কোথায় সবচেয়ে বেশি হ্রদ?

যুক্তরাষ্ট্রে আলাস্কা অঙ্গরাজ্যে সবচেয়ে বেশি হ্রদ রয়েছে। তবে অনেক হ্রদের নামই অজানা। অন্যদিকে, মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে রয়েছে সবচেয়ে বেশি নামকরণকৃত হ্রদ, যেটিকে বলা হয় “১০ হাজার হ্রদের দেশ”।

তাহলে ‘হাজার হ্রদের দেশ’ ফিনল্যান্ড কই?

বিভিন্ন তথ্যসূত্রে বলা হয়, ফিনল্যান্ডে রয়েছে ১,৮৭,৮৮৮টি হ্রদ, যা একে “হাজার হ্রদের দেশ” হিসেবে পরিচিত করেছে। তবে ফিনল্যান্ডের এই পরিসংখ্যানে ৫০০ বর্গমিটারের বেশি আয়তনের সব পানিশয়কে হ্রদ হিসেবে ধরা হয়েছে। কিন্তু Nature Communications–এর গবেষণায় শুধুমাত্র ০.১ বর্গ কিমি বা তার বেশি আয়তনের হ্রদ ধরা হয়েছে। সেই কারণে ফিনল্যান্ড এই তালিকায় স্থান পায়নি।

বিশ্বের হ্রদ রক্ষা কেন জরুরি?

বিশ্বের সব হ্রদ মিলে তারা জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ, বিশুদ্ধ পানির উৎস এবং জীববৈচিত্র্যের রক্ষা কবচ হিসেবে কাজ করে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অনেক হ্রদের অস্তিত্ব হুমকিতে পড়বে। তাই বিশ্বব্যাপী একটি হ্রদ সংরক্ষণ তালিকা ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।