ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১১ জুন ২০২৫, ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঈদের তিন দিন পরও ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ

সোহাগ খান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঢাকা

প্রকাশিত: ১৩:৪২, ১০ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৩:৪৪, ১০ জুন ২০২৫

ঈদের তিন দিন পরও ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ

ছবি: জনকণ্ঠ

ঈদের খুশি কবে কাঁদিয়ে ফেলে? হয়তো তখনই, যখন উৎসবের রঙ পেরিয়ে আসে বাস্তবের কষ্টমাখা ধূসরতায়। কেরানীগঞ্জের মানুষ জানে, ঈদের তিন দিন পরও যখন কোরবানির হাটের গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে থাকে, তখন উৎসবের নাম শুধু এক নিঃশ্বাসে বিরক্তির প্রতিধ্বনি।

বুড়িগঙ্গা যেন এবার আর সহ্য করতে পারছে না। কদমতলী থেকে জিনজিরা, হাসনাবাদ থেকে আমবাগিচা—সর্বত্রই তার বুক চিরে ফেলা হচ্ছে ময়লার স্তূপে। যেখানে কোরবানির পশুদের ক্ষণস্থায়ী হাট বসেছিল, সেখানেই এখন পড়ে আছে গরুর গোবর, পচা খড়, পঁচে ওঠা খাদ্য আর বাঁশ-খুঁটির ধ্বংসাবশেষ।

সরকারি নিয়ম বলে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব বর্জ্য সরিয়ে ফেলতে হবে। কিন্তু তিন দিন পার হয়ে গেলেও কেরানীগঞ্জের আকাশে এখনো ভেসে বেড়াচ্ছে অদৃশ্য দুর্গন্ধের অশুভ ছায়া। আমবাগিচার মাঠে বাঁশখুঁটিগুলো দাঁড়িয়ে আছে এখনও, যেন ঈদের স্মৃতি নয়—কোনো অপমানিত আত্মার মতো অভিমান নিয়ে অপেক্ষায়।

বাবুবাজার ব্রিজের নিচে দাঁড়ালে দেখা যায়, রাস্তায় শুয়ে আছে একেকটা ময়লার স্তূপ—নীরবে চিৎকার করছে পরিষ্কার না হওয়ার অভিযোগে। মহাসড়কের ওপর পড়ে থাকা আবর্জনা শুধু যানজটই বাড়াচ্ছে না, কেরানীগঞ্জবাসীর হৃদয়ে জমা করছে ক্ষোভের এক চেপে রাখা নদী।

রাস্তায় চলতে চলতে দেখা মিলল মো. শহীদের। রিকশাচালক, জীবনের গতি রিকশার চাকায়। তার কণ্ঠে ক্লান্তি—“রাস্তা তো বন্ধ, বাঁশ-খুঁটি খোলেনি। যাত্রীও কম, কষ্টই শুধু বেড়েছে।” পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তাহমিনা খান জেসির চোখে ক্লান্তি নয়, যেন হতাশার গাঢ় ছায়া। এইচএসসি পরীক্ষার্থী সে, বলে—“মশার উপদ্রব, গন্ধ, আর চারপাশের আবর্জনায় মনোযোগ ধরে রাখতে পারছি না। এমন পড়ালেখা নিয়ে কী হবে?”

কথা হয় স্থানীয় ইজারাদারদের সঙ্গেও। একেকজন একেক কথা বললেন, দায় দিলেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ঘাড়ে। কেউ বললেন, টাকা দিয়েছি, কাজ হয়নি। কেউ বললেন, ‘এটা সমন্বয়ের অভাব’। নদীতে ময়লা ফেলার অভিযোগ জানেন না, দাবি করলেন এমনও কেউ। অথচ নদীর বুকে এখনও ভাসছে কাঁচা গোবরের পচা গন্ধ।

উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে নির্বাহী কর্মকর্তা রিনাত ফৌজিয়া ফোন রিসিভ করলেন না। হোয়াটসঅ্যাপেও রইল না কোনো জবাব।

কেরানীগঞ্জের মানুষ জানে, ঈদের পর এমন পরিস্থিতি একরকম বার্ষিক রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। উৎসবের শেষে একটা দীর্ঘশ্বাস—এবছরও বর্জ্য সরেনি সময়মতো, এবছরও দূষণ ছড়াল নদীতে, এবছরও শহর ঠেকাতে পারল না আবর্জনার থাবা।

কে নেবে এর দায়? কে ফিরিয়ে দেবে নিঃশ্বাসের নির্মলতা, নদীর স্বচ্ছতা, আর পরীক্ষার্থীর পড়ার একাগ্রতা?
কেরানীগঞ্জ আজ শুধুই এক শহর নয়—সে যেন বর্জ্য-আবর্জনায় ঢেকে রাখা এক অদৃশ্য বেদনার প্রতিচ্ছবি।

মুমু ২

×