ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

টিকটক দিচ্ছে চাকরির সুবর্ণ সুযোগ! যুক্তরাজ্যে নতুন অফিস ও ৫০০ পদে নিয়োগের ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ১১ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৯:২৭, ১১ জুন ২০২৫

টিকটক দিচ্ছে চাকরির সুবর্ণ সুযোগ! যুক্তরাজ্যে নতুন অফিস ও ৫০০ পদে নিয়োগের ঘোষণা

যুক্তরাজ্যে টিকটকের জনপ্রিয়তা নতুন উচ্চতায়। মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী সংখ্যা ৩ কোটির বেশি ছাড়ানোর পর এবার দেশটিতে আরও বড় পরিসরে কাজ শুরু করতে চলেছে টিকটক। জনপ্রিয় এই ভিডিও অ্যাপটি ঘোষণা দিয়েছে, তারা যুক্তরাজ্যে ৫০০টিরও বেশি নতুন চাকরি তৈরি করবে এবং লন্ডনে খুলবে দ্বিতীয় বৃহৎ অফিস।

চীনা মালিকানাধীন এই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটি ২০২৫ সালের মধ্যে তাদের যুক্তরাজ্যভিত্তিক কর্মী সংখ্যা ৩ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা করেছে। এই উদ্যোগকে প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাজ্যের প্রতি তাদের “গভীর আস্থার প্রতীক” হিসেবে তুলে ধরেছে।

নতুন অফিসটি লন্ডনের বারবিকান এলাকায় নির্মাণ করা হবে, যার আয়তন হবে ১ লাখ ৩৫ হাজার বর্গফুট। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালের শুরুতেই এটি চালু হবে। এর আগে ২০২২ সালে টিকটক লন্ডনের ফাররিংডন এলাকায় তাদের ইউকে হেডকোয়ার্টার চালু করেছিল।

ব্রিটেনে টিকটকের রেকর্ড: ইউরোপে সর্বোচ্চ ব্যবহারকারী এখানেই

টিকটকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে প্রতি মাসে ৩০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ অ্যাপটি ব্যবহার করেন। ইউরোপের যেকোনো দেশের তুলনায় এটি টিকটকের সবচেয়ে বড় ব্যবহারকারীভিত্তিক বাজার।

টিকটকের যুক্তরাজ্য শাখার পরিচালক এবং বৈশ্বিক অপারেশন ও নিরাপত্তা প্রধান অ্যাডাম প্রেসার বলেন, “চাকরি, উদ্ভাবন কিংবা ব্যবসায়িক বিনিয়োগ যে পথেই হোক, আমরা যুক্তরাজ্যে আমাদের উপস্থিতি আরও শক্তিশালী করতে চাই। ব্রিটেন এখন আমাদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।”

টিকটকের এই বড় ঘোষণা এসেছে এমন সময়ে, যখন ব্রিটিশ সরকার শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহারের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের চিন্তাভাবনা করছে। শিক্ষামন্ত্রী পিট কাইল ইঙ্গিত দিয়েছেন, রাতে ১০টার পর মোবাইল ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞাসহ প্রতিদিন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে সময়সীমা নির্ধারণের মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে।

সম্প্রতি দুটি জনপ্রিয় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, সরকার সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার দুই ঘণ্টার মধ্যে সীমিত রাখার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।

এরই মধ্যে পাস হওয়া ‘অনলাইন সেফটি অ্যাক্ট’ অনুযায়ী, ২০২৫ সাল থেকে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে অফকমের তৈরি নতুন নিরাপত্তা গাইডলাইন অনুসরণ করতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন আইনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই নিয়ম ভঙ্গ করলে বড় অঙ্কের জরিমানা এমনকি ওয়েবসাইট বন্ধের শাস্তিও থাকছে।

নিরাপত্তা ও গোপনীয়তায় টিকটকের বড় বিনিয়োগ

এই প্রসঙ্গে টিকটকের প্রেসার বলেন, শুধু ব্যবসা সম্প্রসারণই নয়, ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তার দিকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। “আমাদের সাফল্যের পেছনে মূল শক্তি হলো একটি নিরাপদ ও উপভোগ্য ডিজিটাল পরিবেশ তৈরির প্রতিশ্রুতি। এই লক্ষ্যেই আমরা নিরাপত্তায় বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করছি,” বলেন তিনি।

২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যে কার্যক্রম শুরু করে টিকটক এবং তখন থেকেই প্রতিষ্ঠানটি করভুক্ত হিসেবে ব্রিটেনের সাথে যুক্ত। তবে সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেটা প্রাইভেসি আইন লঙ্ঘনের কারণে আয়ারল্যান্ডের তথ্য সুরক্ষা কমিশন টিকটককে ৫৩০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করে। অভিযোগ ছিল, ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য চীনে স্থানান্তর এবং সে বিষয়ে স্বচ্ছতা না রাখার।

প্রতিষ্ঠানটি অবশ্য ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালানোর ঘোষণা দিয়েছে।


টিকটকের মূল মালিকানা চীনভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের হাতে থাকায় বিশ্বব্যাপী একাধিক দেশেই প্ল্যাটফর্মটি নজরদারির মুখে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকির কথা তুলে ধরে অ্যাপটি নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে।

তবে এই চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও টিকটক ব্রিটেনে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি, নিরাপত্তা জোরদার এবং কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য নিরাপদ ও উপযোগী প্ল্যাটফর্ম গঠনে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে।


চাকরির নতুন সুযোগ, প্রযুক্তিতে উন্নয়ন আর বিশাল ব্যবহারকারীভিত্তিক সম্প্রসারণ সব মিলিয়ে টিকটক এখন ব্রিটেনের ডিজিটাল অর্থনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠছে। তবে শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা, তথ্য সুরক্ষা ও আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবিলা করেই প্রতিষ্ঠানটিকে সামনে এগোতে হবে।

এই মুহূর্তে ব্রিটেনের তরুণ প্রজন্ম থেকে শুরু করে উদ্যোক্তা ও কনটেন্ট নির্মাতাদের কাছে টিকটক শুধু একটি অ্যাপ নয়, বরং একটি বড় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যেখানে বিনিয়োগ ও সম্ভাবনার দুটিই উজ্জ্বলভাবে বিদ্যমান।


সূত্র:https://tinyurl.com/yvjnjhey

আফরোজা

আরো পড়ুন  

×