
বসত বাড়ি শুধু একটি বসবাসের জায়গা নয়, এটি আমাদের জীবনের পরিপূর্ণতা, মনের প্রশান্তির আবাস। এই প্রিয় স্থানটিকে সাজিয়ে তোলার অনেক উপায় থাকলেও ফুলগাছ দিয়ে সৌন্দর্যবর্ধন সবচেয়ে প্রাকৃতিক, স্বাস্থ্যকর ও হৃদয়গ্রাহী এক পদ্ধতি। ফুলের রঙ, গন্ধ, আর সৌন্দর্য যেন আমাদের ক্লান্ত জীবনে বাড়তি শান্তি ও আনন্দ যোগ করে। প্রকৃতির সৌন্দর্য ঘরের কোণে এনে দেওয়ার এই চেষ্টায় কীভাবে ফুলগাছ দিয়ে বসতবাড়িকে সাজানো যায়, চলুন জেনে নিই।
প্রবেশপথের দুপাশে ফুলের শোভা
প্রবেশপথ যে কোনো বাড়ির ‘প্রথম ছাপ’। এর দুপাশে যদি রঙ্গন, জিনিয়া, গোলাপ, গাঁদা, নয়নতারা কিংবা কাঞ্চন ফুলগাছ রোয়া হয়, তবে বাড়ির সৌন্দর্য কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। গোলাপ বা চন্দ্রমল্লিকা গাছের গুচ্ছ প্রবেশপথে স্বাগত জানাবে অতিথিকে।
বারান্দা ও জানালার গ্রীলে টব বসিয়ে রঙিন আয়োজন
শহর বা গ্রামে ছোট-বড় যে বাড়িই হোক না কেন, বারান্দা ও জানালার পাশে টবে রোপণ করা যায় বেলি, জুঁই, হিবিসকাস (জবা), বাগানবিলাস, পেটুনিয়া, ডালিয়া, সূর্যমুখী, রেইনলিলি ইত্যাদি ফুলগাছ। জানালার পাশে ঝুলন্ত ঝাড়ু ফুল বা ঝুমকো লতা আরও নান্দনিকতা যোগ করে।
আঙিনায় বাগান: নিজের হাতে সাজানো স্বর্গ
যাদের সামান্য জায়গা আছে, তারা এক কোণে একটি ফুলের বাগান করতে পারেন। এতে লাগানো যেতে পারে মরিচা, রজনীগন্ধা, গন্ধরাজ, টগর, বকুল, বেলিফুল ইত্যাদি। গাছগুলো শুধু চোখ নয়, মনও জুড়িয়ে দেয়। রাতে রজনীগন্ধা বা বেলির সুবাস গোটা উঠোনকে মায়াবী করে তোলে।
ছাদবাগানে ফুলগাছ
যাদের নিচে জায়গা কম, তারা ছাদে টবে বা ড্রামে করে ফুলগাছ লাগাতে পারেন। বিশেষ করে মরসুমি ফুল—শীতকালে প্যানজি, অ্যান্থারিনিয়াম, গাঁদা, বসন্তকালে সূর্যমুখী, জিনিয়া এবং গ্রীষ্মে পেটুনিয়া, প্যাসিফ্লাওয়ার বা কৃষ্ণচূড়া ছোট আকৃতিতে লাগানো যায়।
প্রাকৃতিক বেড়া তৈরি করুন ফুলগাছ দিয়ে
ফুলেল ঝোপঝাড় দিয়ে প্রাকৃতিক বেড়া তৈরি করে বাড়ির চারপাশ ঘেরা যায়। স্নেহের ছায়া দিতে পারে শিমুল, কদম, কৃষ্ণচূড়া কিংবা রাধাচূড়ার মতো ফুলফলদ গাছ। এছাড়া হেজ টাইপ গাছ হিসেবে টগর বা রঙ্গন চমৎকার।
বিশেষ আয়োজন: সুগন্ধি ও ঔষধি ফুলগাছ
গন্ধরাজ, চাঁপা, জুঁই, বেলি, বকুল ফুল শুধু চোখ নয়, ঘ্রাণেও মন ভরিয়ে তোলে। এগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই আবার ঔষধিগুণে ভরপুর। যেমন—চন্দন ফুল ত্বকের যত্নে, বকুল ফুল দাঁতের স্বাস্থ্যে উপকারী। এরা একাধারে সৌন্দর্য ও সুস্থতা আনে।
বাচ্চাদের জন্য রঙিন ফুলের কর্নার
বাড়িতে যদি শিশু থাকে, তবে তাদের জন্য একাংশে রঙিন ফুলের কর্নার তৈরি করতে পারেন। সেখানে থাকবে সূর্যমুখী, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, হিজল, লেনটানা ফুল ইত্যাদি। এতে তারা প্রকৃতির সঙ্গে মিশতে শিখবে, ফুলের নাম শিখবে, ভালোবাসবে মাটি ও গাছকে।
কিছু যত্নের কথা:
- ফুলগাছকে নিয়মিত পানি ও আলো দিন।
- পাতা ঝরলে বা ফুল শুকিয়ে গেলে ছাঁটাই করুন।
- প্রাকৃতিক সার (কম্পোস্ট, গোবর) ব্যবহার করুন।
- কীটনাশকের পরিবর্তে ব্যবহার করুন নিমপাতা বা রসুনজল।
ফুলগাছ শুধু বাড়ির সৌন্দর্য বাড়ায় না, এটি একটি আবেগের জায়গা। এটি আমাদের মনকে প্রশান্ত করে, শিশুদের প্রকৃতিপ্রেম শেখায়, আমাদের আত্মার সাথে প্রকৃতির সংযোগ ঘটায়। তাই আসুন, আমরা আমাদের বসতবাড়িকে ফুলে ফুলে সাজিয়ে তুলি, গড়ে তুলি এক টুকরো স্বপ্নের মতো সবুজ আর রঙিন আবাসভূমি।
আঁখি