ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দুই পা নেই: তবুও সংসারের হাল ধরে রেখেছেন চাঁদপুরের রফিজ উদ্দিন

কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, চাঁদপুর

প্রকাশিত: ১৭:৪২, ১৩ জুন ২০২৫

দুই পা নেই: তবুও সংসারের হাল ধরে রেখেছেন চাঁদপুরের রফিজ উদ্দিন

ছবিঃ সংগৃহীত

দুর্ঘটনায় দুই পা হারালেও ভিক্ষাবৃত্তিতে না জড়িয়ে নিজের সংসারের হাল ধরে রেখেছেন চাঁদপুরের লঞ্চঘাটের রফিজ উদ্দিন (৫২)। তিনি একটি ট্রাইসাইকেলে কয়েক কেইস পানির বোতল বিক্রি করে সংসারের আয় খুঁজে নিয়েছেন।

শুক্রবার (১৩ জুন) দু’বেলা এভাবেই লঞ্চঘাটে পানি বিক্রির কথা জানিয়েছেন রফিজ উদ্দিন।

তিনি জানান, এই লঞ্চঘাটেই তার ভাগ্যের ওঠানামা। ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারিয়ে কলা, রুটি, সিগারেট বিক্রি শুরু করেন লঞ্চঘাটে। একদিন হকারি করার সময় দু’টি লঞ্চের মাঝখানে তার দু’পা আটকে যায়। পরে পায়ের অবস্থা বেগতিক দেখে চিকিৎসকরা দু’পা কেটে ফেলেন। তবে সংসারে আর কেউ আর্থিক জোগান দেওয়ার ক্ষমতা না রাখায় নিজেই নেমে পড়েন ব্যবসায়।

রফিজ উদ্দিন বলেন, আমার স্ত্রীসহ দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তাদের কেউই উপার্জনক্ষম নন। তাই পুরো সংসারের খরচ আমাকেই চালাতে হচ্ছে। দিনে দু’বেলা নিয়ম করে পানির বোতল নিয়ে ট্রাইসাইকেলে করে লঞ্চঘাটে বসি। প্রায় ৩০ বছর যাবৎ আমি এভাবেই ব্যবসা চালাচ্ছি। কাজের মধ্যে থাকায় আমার প্রতিবন্ধিতা মনোবলকে আটকাতে পারেনি। এখন দিনে ৬-৭শ’ টাকা আয় করছি। এই আয়ে স্ত্রী ও নিজের চিকিৎসার খরচ এবং মেয়ের পড়ালেখাসহ পুরো সংসারের খরচ চালাচ্ছি। বড় ছেলেকে বিয়ে দিয়ে আলাদা করে দিয়েছি এবং ছোট ছেলেকে ক্যামেরা কিনে দিয়েছি, সে ওটা দিয়ে বড় স্টেশনে ফটোগ্রাফি করছে।

রফিজ উদ্দিন বলেন, আমি লঞ্চঘাটের টিলাবাড়ী এলাকায় একটি টিনশেড ঘরে পরিবারসহ ভাড়া থাকি। যাতায়াতের সুবিধার জন্য একটি নতুন ট্রাইসাইকেল বা আর্থিক সহায়তা পেলে উপকৃত হতাম। ট্রাইসাইকেল আমি নিজেই চালিয়ে লঞ্চঘাটে যেতে পারবো। কেউ এগিয়ে এলে ভালো লাগবে।

একই এলাকার বাসিন্দা মোবারক হোসেন বলেন, কয়েক বছর ধরে প্রতিবন্ধী রফিজ উদ্দিন লঞ্চঘাট এলাকায় ফুটপাতে বসে পানির বোতল বিক্রি করতে দেখছি। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।

রফিজ উদ্দিনের স্ত্রী ভানু বেগম বলেন, তাঁর স্বামী প্রতিবন্ধী হলেও অন্যের কাছে হাত পাতেন না। নিজের আয়ে সংসার চালান। তিনি স্বামীর এই কাজে সহযোগিতা করে থাকেন। দুই পা না থাকায় বিকল্প হিসেবে দুই হাত ও মুখ ব্যবহার করেন।

এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা সুমন নন্দী বলেন, রফিজ উদ্দিন নিজের ভোটার আইডি কার্ড, শরীরের সম্পূর্ণ ছবিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আমাদের কার্যালয়ে এলে আমরা যত দ্রুত সম্ভব তাকে একটি নতুন ট্রাইসাইকেল বা হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা করে দেবো। পাশাপাশি আর্থিক সহায়তার ব্যাপারটিও আমরা দেখবো। এরূপ মানুষের সেবাতেই আমরা কাজ করছি।

ইমরান

×