ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভুল মানচিত্র প্রকাশে বিপাকে ইসরায়েল: তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে ক্ষমা চাইল আইডিএফ

প্রকাশিত: ১১:০২, ১৪ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৭:১০, ১৪ জুন ২০২৫

ভুল মানচিত্র প্রকাশে বিপাকে ইসরায়েল: তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে ক্ষমা চাইল আইডিএফ

ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনার মধ্যে ভারতের প্রতি অপ্রত্যাশিত এক বার্তা পাঠাল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (আগে টুইটার) ভারতের ভুল সীমান্ত চিত্রসংবলিত মানচিত্র প্রকাশ করে তোপের মুখে পড়ে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (IDF)—যেখানে জম্মু-কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে দেখানো হয়। অনলাইনে ব্যাপক সমালোচনার পর IDF অবশেষে ক্ষমা প্রার্থনা করেছে।

ভুল মানচিত্র, উত্তপ্ত প্রতিক্রিয়া

শুক্রবার রাতে IDF তাদের এক পোস্টে মধ্যপ্রাচ্য ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলজুড়ে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের সম্ভাব্য প্রভাব বোঝাতে একটি মানচিত্র প্রকাশ করে। সেই মানচিত্রে ভারতকে দেখানো হয় বিকৃত সীমারেখায়—জম্মু-কাশ্মীর অংশটি পাকিস্তানের অংশ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।

এই পোস্টের পরপরই ভারতীয় নেটিজেনদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু-কে ট্যাগ করে পোস্টটি মুছে ফেলার দাবি জানান। একজন লিখেছেন, ‘এখন বুঝছেন কেন ভারত নিরপেক্ষ থাকে। কূটনীতিতে কারও সঙ্গে স্থায়ী বন্ধুত্ব হয় না।’

৯০ মিনিটে ক্ষমা প্রার্থনা, তবুও বিতর্ক থামেনি

প্রাথমিক পোস্টের ৯০ মিনিট পর IDF এক প্রতিক্রিয়ায় জানায়, ‘এই মানচিত্রটি কেবল একটি ভৌগোলিক অঞ্চল চিত্রিত করেছে। এটি সুনির্দিষ্টভাবে সীমান্ত উপস্থাপন করেনি। এতে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে আমরা দুঃখিত।’

তবে এই বক্তব্য ভারতীয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। একজন মন্তব্য করেন, ‘ভারতের সেনারা যেখানে দেশের ভূখণ্ড রক্ষায় জীবন দিচ্ছেন, সেখানে এমন অবহেলা মেনে নেওয়া যায় না।’

ভারতের প্রতিক্রিয়া নেই, তবে বার্তা স্পষ্ট

ভারত সরকার এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ভারতের অবস্থান, জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং পাকিস্তান ও চীনের অবৈধ দখলে থাকা অঞ্চলগুলোও একদিন পুনরুদ্ধার হবে। মে মাসে পাহালগামে সন্ত্রাসী হামলার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফের এই অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।

ভারত-ইসরায়েল সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে বিভ্রান্তি

এই ভুল মানচিত্র প্রকাশ অনেক ভারতীয়র কাছেই ছিল অপ্রত্যাশিত। কারণ, গত এক দশকে ভারত-ইসরায়েল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ হয়েছে।

  • ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইসরায়েল সফর করেন—এটাই ছিল কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সফর।
  • বাণিজ্যিক দিক থেকেও ভারত এখন ইসরায়েলের অন্যতম শীর্ষ অংশীদার—যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, হংকং ও চীনের পরই ভারতের অবস্থান।

 

  • পাশাপাশি, ভারত হচ্ছে ইসরায়েলি সামরিক প্রযুক্তির অন্যতম বড় ক্রেতা।

এই প্রেক্ষাপটে সীমান্তসংক্রান্ত এমন স্পর্শকাতর ভুলে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন।

ইরান নিয়ে বার্তা দিতে গিয়ে বিতর্ক

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মূলত ইরানকে ‘বিশ্বের জন্য হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করতে গিয়েই এই মানচিত্র প্রকাশ করে। তাদের বক্তব্য ছিল, ‘ইরান কেবল ইসরায়েলের নয়, গোটা বিশ্বের হুমকি। আমাদের আর কোনো বিকল্প ছিল না।’

এই পোস্টে একটি মানচিত্রে ইরানকে কেন্দ্র করে লাল বৃত্তে ঘিরে দেখানো হয় তার মিসাইলের সম্ভাব্য পাল্লা। সেখানে ভারত, চীন, রাশিয়া, তুরস্ক, সৌদি আরব, লিবিয়া, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, কাজাখস্তানসহ বহু দেশকেই ধরা হয় সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হিসেবে।

কিন্তু ভারতকে ভুল সীমারেখায় উপস্থাপন করায় মূল আলোচনা ঘুরে যায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অজ্ঞতা ও কূটনৈতিক বোধহীনতা নিয়ে।

যুদ্ধের প্রস্তুতি, আর এক দফা সংকট?

এদিকে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার উত্তেজনা আবারও চরমে পৌঁছেছে।

  • ইসরায়েল দাবি করছে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে—এ কারণে তারা সামরিক হামলা চালিয়েছে।
  • পাল্টা জবাবে ইরান ডজনখানেক মিসাইল ছোড়ে, যেগুলোর কিছু মার্কিন সহায়তায় প্রতিহত করা হয়।
  • নেতানিয়াহু বলেন, ‘এটাই শেষ নয়, আরও আসছে।’ আর খামেনি বলেন, ‘ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু করেছে, আমরা তার উপযুক্ত জবাব দেব।’

 

সূত্র: এনডিটিভি।

রাকিব

×