ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

গণপরিবহন সংকট ও অতিরিক্ত ভাড়ায় ভোগান্তিতে যাত্রীরা

ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরেছেন কর্মব্যস্ত মানুষ

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

প্রকাশিত: ০০:৫৩, ১৫ জুন ২০২৫

ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরেছেন কর্মব্যস্ত মানুষ

ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটি কাটিয়ে ফিরেছে কর্মব্যস্ত মানুষ। রাজধানী পেয়েছে তার চিরচেনা রূপ।

ঈদুল আজহার দীর্ঘ ১০ দিনের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরছেন নগরবাসী। কর্মচঞ্চল হয়ে উঠছে রাজধানী ঢাকা। তাই শনিবার প্রতিটি বাস, ট্রেন ও লঞ্চে যাত্রী বোঝাই করে ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। যাত্রাপথে গণপরিবহন সংকট ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করে যাত্রীরা। এ ছাড়া যানবাহনের চাপের কারণে রাজধানীর প্রবেশমুখে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজট। ঢাকা প্রবেশ করেও দুর্ভোগের শেষ নেই।

বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে গণপরিবহনের সংকটে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে ঢাকামুখী যাত্রীদের। তবে বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে দূরপাল্লার বাসের পাশাপাশি সিটি সার্ভিস বাস চলাচলের কারণে ঈদের যাত্রায় কিছুটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। এটা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ গণপরিবহন বিশেষজ্ঞদের। সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকার প্রবেশমুখে শনিবার সকাল থেকেই মানুষের ভিড় দেখা গেছে। বিশেষ করে সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, টিটিপাড়াসহ আশপাশের বাস টার্মিনাল ও কাউন্টারগুলোতে সকাল থেকেই যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বাসগুলো একের পর এক ঢুকছে রাজধানীতে। তবে বাস থেকে নেমেই দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে অনেককেই। রাজধানীতে ফিরে গণপরিবহন সংকটের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তাদের। ভ্যাপসা গরমের মধ্যে যানবাহনের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। দুই-একটি সিএনজি অটোরিক্সা পাওয়া গেলেও অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেন যাত্রীরা। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা যারা পরিবার ও শিশু সন্তান নিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করেছেন। পরিবহন সংকটে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে তাদের।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় কুমিল্লা থেকে আসা আব্দুস সালাম নামের এক যাত্রী জানান, শনিবার দুপুর ২টায় বাস থেকে নেমেছি। আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে এখনো গণপরিবহন পাইনি। ছেলে আর ব্যাগ নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছি। সিএনজিতে ভাড়া বেশি চাচ্ছে। যাত্রাবাড়ী থেকে মিরপুরের ভাড়া আগে ছিল ৩০০-৪০০ টাকা। এখন চাচ্ছে ৮০০-১০০০ টাকা। একই ধরনের অভিযোগ করেন চট্রগ্রাম থেকে আসা সাইফুল ইসলাম নামের আরেক যাত্রী। তিনি বলেন, শুধু ঢাকায় পৌঁছলেই তো হলো না। বাসা পর্যন্ত যেতে হবে। কিন্তু বাসতো কম। যা চলছে তাতেও সিট নেই।

সিএনজি ও অটোরিক্সা ভাড়া অনেক বেশি। তাই বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। ঈদের ছুটি শেষে রবিবার থেকে খুলছে সকল অফিস-আদালত। তাই ঢাকামুখী যাত্রীর চাপ বেড়েছে সড়ক, মহাসড়কে। যানবাহনের চাপে ঢাকার প্রবেশমুখে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজট। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে সেতুতে চাপের কারণে সৃষ্টি হয়েছে যানজট। এতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে ঢাকামুখী যাত্রীদের। 
এর মধ্যে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখ পোস্তগোলা ও বাবু বাজার সেতু দু’টি। সেতু দু’টি দুই লেনের হওয়ার কারণে সেতুর মুখে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। গত শুক্রবার পোস্তগোলা সেতুর ওপরে একটি গাড়ী বিকল হয়ে পড়ে। এতে দীর্ঘ সময় যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের। একই অবস্থা অন্য সেতুগুলোর। শনিবার যমুনা সেতু হয়ে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। যানজটের কারণে সিরাজগঞ্জ থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত ৩-৪ কিলোমিটার সড়ক পাড় হতে ৪-৫ ঘণ্টা বেশি সময় লেগেছে।

এতে ঢাকামুখী প্রতিটি দূরপাল্লার বাস নির্ধারিত সময় থেকে দেরিতে ঢাকায় প্রবেশ করেছে। রাজধানীর গাবতলীর হানিফ পরিবহনের এক কর্মী জানান, শনিবার দুপুর পর্যন্ত মাত্র একটি বাস নির্ধারিত সময়ে ঢাকা পৌঁছেছে। উত্তরবঙ্গের বাকি রুটের সব বাসই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৩-৪ ঘণ্টা দেরিতে ঢাকা আসছে। এখনো ৮ ও ৯ বাস ঢাকা পৌঁছেনি। আবুল হোসেন নামের হানিফ পরিবহনের এক বাস চালক জানান, বগুড়া থেকে শুক্রবার রাত ১১টায় বাস ছেড়েছে, স্বাভাবিকভাবে ভোর ৫টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে পৌঁছানো সম্ভব, সেখানে ঢাকা পৌঁছলাম চার ঘণ্টা দেরিতে।

সড়কে চাপ নেই। দুর্ঘটনার খবরও পাইনি। কিন্তু সিরাজগঞ্জের কডডার মোড় থেকে যমুনা সেতুর টোল প্লাজা পর্যন্ত এই বাড়তি সময় লেগে গেছে। রাজশাহী থেকে হানিফ পরিবহনের একটি বাসের এক যাত্রী বলেন, ‘ঈদের আগেও গ্রামে যেতে ভুগেছি। ঈদ শেষেও ঢাকা ফিরতেও সড়কে ভোগান্তিতে পড়তে হলো, শুধু শুধু ৩ ঘণ্টা দেরি।’ শ্যামলী পরিবহনের বাসে দিনাজপুর থেকে ঢাকা আসা মনির হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, ‘রাত সাড়ে ৯টার বাস, ভোর ছয়টার মধ্যেই পৌঁছে যাওয়ার কথা সেখানে পৌঁছলাম ১০টায়। যমুনা সেতুর কাছে আসার পর মনে হচ্ছে গাড়ী নড়ছেই না। কারণ জানি না, সেতুর মুখে প্রচ- জটলা ছিল। সেটা পাড়ি দিতেই এত দেরি। 
শনিবার সকালে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, টিকিট কাউন্টারগুলোর সামনে তেমন কোনো মানুষের ভিড় নেই। কাউন্টার পেরিয়ে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতেই দেখা গেছে শত শত মানুষ অপেক্ষা করছেন ট্রেনের জন্য। প্রতিটি ট্রেনেই অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। ট্রেনের প্রতিটি কোচগুলো অতিরিক্ত মানুষ বোঝাই ছিল। ট্রেনের ছাদ, ইঞ্জিনের রেলিং কোনো জায়গায় বাদ নেই। ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা প্রবেশ করতে দেখা গেছে রেলপথের যাত্রীদের।

এর মধ্যে আবার অনেক যাত্রী ঢাকা বাইরে যেতে দেখা গেছে। কমলাপুর স্টেশনে সাইদুল ইসলাম নামের এক যাত্রী জানান, তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করি, তার পোস্টিং নওগাঁ শহরে। গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। আগামীকাল (রবিবার) থেকে যেহেতু ব্যাংক খোলা তাই আজকে (শনিবার) রওনা হয়েছি।

×