ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

বিচার ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন! সহজ হলো জমির মালিকানা প্রমাণ পদ্ধতি

প্রকাশিত: ০৯:৪৯, ১৫ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৯:৫০, ১৫ জুন ২০২৫

বিচার ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন! সহজ হলো জমির মালিকানা প্রমাণ পদ্ধতি

ছবিঃ সংগৃহীত

দেশের বিচার ব্যবস্থায় এসেছে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। বিশেষ করে জমির মালিকানা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলা দেওয়ানি মামলাগুলোর জটিলতা কমাতে এবার চালু হয়েছে দ্রুত ও প্রযুক্তিনির্ভর নতুন বিচারিক ব্যবস্থা। এতে শুধু রায়ই নয়, দ্রুত বাস্তবায়নের ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হয়েছে— যা ভূমি মালিকদের জন্য বড় স্বস্তির বার্তা।

জমি মামলা নিষ্পত্তিতে প্রযুক্তির ব্যবহার

নতুন ব্যবস্থায় মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ, সমন জারি থেকে শুরু করে দলিল যাচাই পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে প্রযুক্তির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সাক্ষীদের আর বারবার আদালতে গিয়ে জবানবন্দি দিতে হবে না; বরং আগেভাগে নেওয়া অ্যাফিডেভিট আদালতে দাখিল করলেই চলবে।

এছাড়া মামলার বিবাদীপক্ষকে সমন পাঠানো যাবে শুধু ডাকযোগে নয়, ই-মেইল, এসএমএস কিংবা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমেও। বিচারকের নির্দেশে এসব মাধ্যমই সমনের বৈধ প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হবে।

বহু বছরের মামলা নিষ্পত্তি হবে ৬ মাসে

আগে যেখানে একটি জমি মামলার নিষ্পত্তিতে ১০ থেকে ১৫ বছর সময় লেগে যেত, এখন তা কমে দাঁড়াবে মাত্র ৬ মাস থেকে ২ বছরের মধ্যে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় সাক্ষ্য গ্রহণ ও শুনানি পরিচালনার ফলে মামলার সময় অনেকটাই সাশ্রয় হবে।

‘ডিক্রিজারি’ মামলা আর নয়

সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে রায় বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে। আগে আদালতের রায় পাওয়ার পরও জমি বুঝে নিতে নতুন করে ‘ডিক্রিজারি মামলা’ করতে হতো। এখন থেকে রায় ঘোষণার পরপরই আদালতের নির্দেশে প্রশাসন সরাসরি দখল বুঝিয়ে দেবে জমির মালিককে। এতে সময় ও খরচ— উভয়ই কমবে।

ভূমি মালিকানা সনদ চালু হচ্ছে জুলাইয়ে

নতুন এই ব্যবস্থার আওতায় জুলাই মাস থেকে চালু হচ্ছে “ভূমি মালিকানা সনদ”— একটি কিউআর কোডযুক্ত ডিজিটাল দলিল। এটি স্ক্যান করলেই জমির মালিকানা, মাপজোক, খতিয়ানসহ অন্যান্য তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করা যাবে। এতে প্রতারণা, জালিয়াতি বা মালিকানা নিয়ে বিভ্রান্তির সুযোগ অনেকটাই কমে যাবে।

মামলার সময়সীমা নির্ধারণ

আইন অনুযায়ী, বাদী ও বিবাদী উভয়পক্ষ সর্বোচ্চ দুইবার করে মোট চারবার সময় চেয়ে নিতে পারবেন। এর মধ্যে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করতে হবে। অর্থাৎ দীর্ঘসূত্রতা ও মামলার নামে বছরের পর বছর সময়ক্ষেপণ বন্ধ হচ্ছে।

এই প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিকায়ন শুধু বিচারপ্রক্রিয়াকে দ্রুততর করবে না, বরং দুর্নীতি কমিয়ে এনে জনগণের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নতুন দিগন্ত খুলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আলীম

×