ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

সরকারি ঘোষণা দুই যুগ আগে হলেও উন্নয়ন এখনও কল্পনায়: ষাটনল পর্যটন কেন্দ্র

সুমন আহমেদ, মতলব (চাঁদপুর)

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ১৫ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৯:৪০, ১৫ জুন ২০২৫

সরকারি ঘোষণা দুই যুগ আগে হলেও উন্নয়ন এখনও কল্পনায়: ষাটনল পর্যটন কেন্দ্র

মেঘনা নদীর পাড়ঘেঁষা, অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়ানো চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ‘ষাটনল’ পর্যটন কেন্দ্রটি আজও রয়ে গেছে উন্নয়ন ও তদারকির বাইরে। সরকারিভাবে ২০০০ সালে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণার পর দীর্ঘ ২৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এখানে নেই কাঙ্ক্ষিত অবকাঠামো উন্নয়ন, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা কিংবা কার্যকর ব্যবস্থাপনা।

পর্যটন সম্ভাবনার দিক থেকে ষাটনল ছিল এক উজ্জ্বল নাম—নদী, বালুকাবেলা আর প্রকৃতির বৈচিত্র্যে মোড়া। কিন্তু পরিকল্পিত উদ্যোগ ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এটি। চলতি বছর কেবল দুটি পুরনো টিনের ছাউনি সংস্কার ছাড়া কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।

পর্যটকদের জন্য এখানে নেই আধুনিক বিশ্রামাগার, শৌচাগার, নিরাপদ খাবার কিংবা পানীয় জলের ব্যবস্থা। সন্ধ্যার পরপরই মাদকসেবীদের আনাগোনায় পর্যটকদের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। অন্যদিকে নদীর পাড়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশ ও ভাঙনের আশঙ্কাও বেড়েছে।

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক সুমাইয়া আক্তার বলেন, “জায়গাটা দারুণ, কিন্তু সন্ধ্যায় কিছু সন্দেহজনক মানুষের আনাগোনায় বেশ ভয় লাগছিল। যদি সরকার নজর দিত, তাহলে এটা খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠত।”

প্রতিটি শুক্র ও শনিবার শত শত পর্যটক এসে প্রকৃতির রূপ উপভোগ করলেও হতাশ হয়ে ফিরছেন তারা। স্থানীয়দের দাবি—যদি দ্রুত কার্যকর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, তবে এই অঞ্চল হয়ে উঠতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন গন্তব্য। এর প্রভাবে তৈরি হবে কর্মসংস্থান, জমির মূল্য বাড়বে, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার পাবে।

স্থানীয় বাসিন্দা কামরুল ইসলাম বলেন, “নৌকাভ্রমণ আর নদী দেখা ছাড়া কিছু নেই। ভালো রেস্ট হাউজ, খাবার দোকান আর নিরাপত্তা থাকলে অনেক বেশি মানুষ আসত।”

একই অভিমত স্কুল শিক্ষার্থী রাকিব হোসেনের—“বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে আসি। বসার জায়গা বা পার্ক থাকলে অনেক বেশি মজা হতো।”

ষাটনল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলম সরকার জানান, পর্যটনকেন্দ্রটিকে ঘিরে একটি পূর্ণাঙ্গ উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে থাকবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, শিশুদের খেলার মাঠ, পার্কিং, রেস্ট শেড এবং পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, “ষাটনলের উন্নয়ন আমাদের অগ্রাধিকারে রয়েছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহকে নিয়ে সমন্বয় সভা করেছি। অনুমোদন পেলে এ বছরেই কাজ শুরুর আশা করছি।”

পর্যটন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রথমে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আধুনিক অবকাঠামো নির্মাণ, পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশ সংরক্ষণের মাধ্যমে ষাটনলকে একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।

স্থানীয়রা আশাবাদী—সরকারি সদিচ্ছা ও স্থানীয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা গেলে ষাটনল একদিন দেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন গন্তব্যে পরিণত হবে।

নুসরাত

×