ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঝিনাইগাতীতে পাহাড়-নদী থেকে অবাধে পাথর-বালু লুট, হারাচ্ছে গারো পাহাড়ের সৌন্দর্য

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝিনাইগাতী, শেরপুর

প্রকাশিত: ১৮:১১, ১৩ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৮:১২, ১৩ জুন ২০২৫

ঝিনাইগাতীতে পাহাড়-নদী থেকে অবাধে পাথর-বালু লুট, হারাচ্ছে গারো পাহাড়ের সৌন্দর্য

শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে পাহাড় ও নদী থেকে অবাধে পাথর ও বালু লুটপাট চলছে। এর ফলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারাচ্ছে গারো পাহাড়। অথচ এই সৌন্দর্যকে ঘিরেই ১৯৯৩ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গারো পাহাড়ের গজনীতে গড়ে তোলা হয়েছিল একটি পর্যটন কেন্দ্র—‘গজনী অবকাশ বিনোদন কেন্দ্র’। প্রতিবছর এই পর্যটনকেন্দ্রে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ ভ্রমণপিপাসু মানুষ ভিড় করেন। এখান থেকে সরকার বিপুল রাজস্বও অর্জন করে।

পর্যটন কেন্দ্রটির চারপাশ ঘিরে রয়েছে পাহাড়, খাল, বিল, নদী ও ঝরনা, যা একে করে তুলেছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। তবে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী চক্র এসব পাহাড়, ঝরনা, নদী ও খালবিল কেটে অবাধে পাথর ও বালু লুট করছে—ফলে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।

জানা গেছে, উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের কালঘোষা নদীর হালচাটি, মালিটিলা, গান্ধীগাঁও, বাঁকাকুড়া, দরবেশতলা, মঙ্গলঝুড়া, ছোট গজনী ও গজনীসহ আশপাশের পাহাড় ও নদী এলাকা থেকে প্রতিনিয়ত পাথর ও বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। শত শত বালুদস্যু ট্রাক, মাহিন্দ্র ও ট্রলির মাধ্যমে রাতদিন এসব পরিবহন করছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এসব প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে হুমকি-ধামকির মুখে পড়তে হয়। ঈদের আগে এক সপ্তাহে বনবিভাগ অভিযান চালিয়ে ৫টি বালু ভর্তি মাহিন্দ্র আটক করলেও, বালুদস্যুরা রাংটিয়া ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে হামলা চালায় এবং কর্মকর্তাদের গালিগালাজ করে।

এছাড়া গত ৪ জুন রাতে বালু ভর্তি ৮-১০টি মাহিন্দ্র জব্দ করার সময় স্থানীয় একজন সাংবাদিককে মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। এর আগে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শ্রমিকদের সাজা দিলে ইউএনও’র বিরুদ্ধেও আন্দোলনে নামে বালু চক্র।

গজনী ফরেস্ট বিট কর্মকর্তা সালেহীন নেওয়াজ বলেন, “লোকবল সংকট ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে আমরা রাতের বেলায় এসব দমনে হিমশিম খাচ্ছি।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, “অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়া হবে।”

প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে অচিরেই হারিয়ে যেতে পারে গারো পাহাড়ের অমূল্য প্রাকৃতিক ঐতিহ্য।

নুসরাত

×