ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দেশের সিদ্ধান্ত বিদেশে নয়, দেশের মাটিতেই হতে হবে: নাসির উদ্দিন পাটওয়ারী

প্রকাশিত: ১৭:৪৯, ১৩ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৭:৫৪, ১৩ জুন ২০২৫

দেশের সিদ্ধান্ত বিদেশে নয়, দেশের মাটিতেই হতে হবে: নাসির উদ্দিন পাটওয়ারী

ছ‌বি: সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেছেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বিদেশের মাটিতে নয়, দেশের মাটিতেই হতে হবে। তিনি বলেন, জনগণের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা ছিল— গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের বিচার সম্পন্ন করা, একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও একটি কার্যকর সংস্কার প্রক্রিয়া চালু করা। তবে বর্তমান সরকার সে পথে হাঁটছে না বরং গণতান্ত্রিক চেতনা উপেক্ষা করে পেছনের দিকে বাংলাদেশকে ঠেলে দিচ্ছে।

তিনি অভিযোগ করেন, লন্ডনে বসে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের মিটিং দেশবাসীর স্বার্থ ও গণআকাঙ্ক্ষার সঙ্গে প্রতারণা। শহীদদের রক্তকে অবমাননা করে বিদেশের মাটিতে মিটিং আয়োজন কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে হবে দেশের জনগণের মাধ্যমে, বিদেশি আলোচনায় নয়।

নাসির উদ্দিন বলেন, ৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর একটি সামাজিক চুক্তি হয়েছিল, কিন্তু সেটিকে কার্যকর না করে দেশকে অন্য খাতে প্রবাহিত করা হয়েছে। আজকের বাস্তবতায় নতুন করে একটি জাতীয় বন্দোবস্ত প্রয়োজন। আর এই বন্দোবস্ত হতে হবে জনগণের ইচ্ছার ভিত্তিতে— কোনো একক দলের সুবিধার জন্য নয়।

তিনি স্পষ্টভাবে জানান, বর্তমান সরকার যদি সংস্কার, বিচার এবং সংবিধান প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় ব্যর্থ হয়, তাহলে এনসিপি দ্বিতীয় গণঅভ্যুত্থানের দিকে যেতে বাধ্য হবে। এমনকি এই সরকার জনগণের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলনে ব্যর্থ হলে এনসিপি কোনো নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করবে না।

এ সময় তিনি বলেন, শুধু রাজা বা রানী বদল হলেই চলে না, কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন। এনসিপি বিশ্বাস করে— গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের লড়াই চলবে।

নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, শহীদদের আত্মত্যাগ ও আহতদের কষ্টের মূল্যায়ন করতে হবে। গ্রামের মানুষের কাছে যেতে হবে, জানতে হবে তারা কী চায়। জনগণের বেদনার প্রতিফলন যদি সরকার বুঝতে পারে, তবেই বিচার ও সংস্কারের প্রক্রিয়ায় তারা সক্রিয় হবে।

বিএনপির অবস্থান নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, বিএনপি এক সময় ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানালেও এখন রোজার আগের সময়সীমায় এসে পৌঁছেছে। কিন্তু তারা এখনো জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র, বিচার বা নতুন সংবিধান নিয়ে কোনো সুস্পষ্ট প্রস্তাব দেয়নি। ফলে এটি বোঝা যাচ্ছে, তারা কেবল ক্ষমতার লোভে যুক্ত হয়েছে, গণআকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করছে না।

সরকার ও বিএনপি উভয়কে দায়ী করে তিনি বলেন, তারা একযোগে কাজ করে দেশের জনগণকে পাশ কাটিয়ে একটি গভীর সংকট তৈরি করছে। জনগণ অতীতেও লড়াই করেছে, ভবিষ্যতেও করবে। জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া কোনো সরকারই বৈধ হতে পারে না।

নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী আরও বলেন, শুধু নির্বাচন করলেই হবে না, সঠিক বিচার ও সাংবিধানিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের অর্থ নেই। এখনকার নির্বাচন কমিশন জনগণের আস্থার প্রতীক নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক শক্তির পক্ষে কাজ করছে। তাই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, আরপিও সংশোধন এবং জাতীয় ঐকমতের ভিত্তিতে নির্বাচন না হলে দেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণ সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ একটি সংকটময় সময়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ— গণআকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী বিচার, সংস্কার, সংবিধান প্রণয়ন এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। না হলে জনগণ আবারও রাস্তায় নামবে, আর সেই আন্দোলন হবে আরও তীব্র ও সুসংগঠিত।

ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/live/WiuewOtOVtc?si=F5UIfdDpu7_ZdJ36

এম.কে.

×