
ছবি: সংগৃহীত
চীনের রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় জুলাই মাসে ৭.২% বেড়েছে, আর আমদানি বেড়েছে গত এক বছরে সর্বোচ্চ হারে। এই বৃদ্ধির পেছনে মূল কারণ ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধে সাময়িক বিরতি, যার সুযোগ নিয়ে চীনা ব্যবসায়ীরা দ্রুত রপ্তানি বাড়িয়ে তোলে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, গত বছরের জুলাইয়ে তুলনামূলক দুর্বল পারফরম্যান্স ছিল বলে এই বছরের উন্নতি অনেকটা সেখান থেকেই এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি গত বছরের তুলনায় প্রায় ২২% কমেছে, আর আমদানি কমেছে প্রায় ১৯%। তবে আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের রপ্তানি দ্বিগুণেরও বেশি হারে বেড়েছে, কারণ চীনা কোম্পানিগুলো তাদের পণ্য বিক্রির গন্তব্য পরিবর্তন করেছে।
চীনা পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র যে নতুন উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছে, তা এখনো স্থগিত আছে এবং অন্য দেশের ক্ষেত্রে তা আলাদাভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
২০২৫ সালের জুলাই শেষে চীনের বৈশ্বিক বাণিজ্য উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ৬৮৩.৫ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বেশি। শুধুমাত্র জুলাই মাসেই উদ্বৃত্ত ছিল ৯৮.২ বিলিয়ন ডলার। এ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি ছিল আমদানির চেয়ে ২৩.৭ বিলিয়ন ডলার বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্যে বর্তমানে অন্তত ৩০% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, কিছু পণ্যে শুল্ক হার আরও অনেক বেশি। ট্রাম্প এর আগেও শুল্ক বাড়িয়ে ২৪৫% পর্যন্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যার পাল্টা হিসেবে বেইজিংও একইভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। তবে পরবর্তীতে দুই দেশই আলোচনার সুযোগ দিতে এসব শুল্ক বাড়ানো সাময়িকভাবে স্থগিত রাখে। সুইডেনে গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত আলোচনার পর এই বিরতি ১২ আগস্টের পরও বাড়ানো হবে কিনা, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
চীন ছাড়া অন্যান্য দেশ থেকেও পণ্য আমদানিতে ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক বাড়িয়েছে, বিশেষ করে যেসব পণ্য অন্য দেশের মাধ্যমে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আনা হয় বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ভিয়েতনাম থেকে সরাসরি আমদানিতে এখন ২০% শুল্ক দিতে হয়, আর চীন থেকে "ট্রান্সশিপড" হয়ে এলে তা ৪০% পর্যন্ত।
ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের ঝিচুন হুয়াং এক প্রতিবেদনে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধে সাময়িক বিরতি থেকে পাওয়া সুবিধা দ্রুতই ফুরিয়ে আসছে। অন্যদিকে, তৃতীয় দেশের মাধ্যমে পাঠানো পণ্যে শুল্ক বাড়ায় আগামী দিনগুলোতে চীনা রপ্তানি চাপে পড়বে।”
বিশ্লেষকরা ধারণা করেছিলেন, জুলাই মাসে ডলার-ভিত্তিক চীনা রপ্তানি ৬% এর কম হারে বাড়বে, যা জুন মাসের ৫.৮% বৃদ্ধির সমান হবে। তবে বৈশ্বিক বাজারে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করেছে।
গত মাসে চীনের আমদানি ৪.১% বেড়েছে, যা জুলাই ২০২৪ সালের পর সর্বোচ্চ। এর মধ্যে অপরিশোধিত তেল, তামা ও সয়াবিন আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
চীনের রেয়ার আর্থ খনিজের রপ্তানি—যেগুলো উচ্চপ্রযুক্তি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের জন্য অপরিহার্য—জুলাই মাসে ১৭.৬% কমেছে, যদিও আগের মাসে এর পতন ছিল প্রায় ৫০%। জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত এই খনিজের রপ্তানি ডলারে ২৪.২% কমেছে, তবে পরিমাণের দিক থেকে তা ১৩% এর বেশি বেড়েছে।
এছাড়া, যানবাহন, সার, জাহাজ এবং অটো পার্টসের রপ্তানিও জুলাই মাসে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
আবির