
ছবি: সংগৃহীত
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে শুরু হওয়া নতুন শুল্ক যুদ্ধের জবাব দিতে প্রস্তুত হচ্ছে ব্রিক্স জোট। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর ওপর সর্বোচ্চ ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়ার পর পাল্টা পদক্ষেপ নিতে জোটবদ্ধ হচ্ছে ব্রাজিল, রাশিয়া, চীন, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
ইতোমধ্যেই ট্রাম্প প্রশাসন ব্রাজিলের ওপর সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। তবে এতে মোটেও বিচলিত নন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা। বরং তিনি এই শুল্ক হুমকিকে “অবৈধ ও রাজনৈতিকভাবে দেশের অভ্যন্তরীণ নীতিতে হস্তক্ষেপের অপচেষ্টা” বলে নিন্দা করেছেন। পাশাপাশি ব্রিক্স সদস্যদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার হুমকি দিয়েছেন।
লুলা ডি সিলভার বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ব্রাজিল ইতোমধ্যে চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন-এর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে। লক্ষ্য একটাই—ট্রাম্পের একতরফা শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গড়ে তোলা।
বিশ্লেষকদের মতে, গত এপ্রিলে ট্রাম্পের ঘোষিত ১০ শতাংশ শুল্ক শুধু ব্রিক্স অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টির জন্য নয়, বরং রাশিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক দুর্বল করতেও এটি একটি কৌশল। ব্রিক্স সদস্য দেশগুলো—বিশেষত চীন, ভারত ও ব্রাজিল—রাশিয়ার প্রধান তেল ক্রেতা। এই অবস্থায়, শুল্ক আরোপের মাধ্যমে ট্রাম্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে রাশিয়ার ওপর সেকেন্ডারি স্যাংশন প্রয়োগ করে ইউক্রেন ইস্যুতে চাপ সৃষ্টি করা।
২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রিক্স জোটের সদস্য দেশগুলোর সম্মিলিত জিডিপি বর্তমানে জি-৭ জোটের থেকেও বেশি। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা যুক্ত হওয়ার পর জোটটি আরও শক্তিশালী হয় এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরও কয়েকটি দেশ এতে আগ্রহ দেখিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হোয়াইট হাউসের এই পদক্ষেপ মার্কিন জাতীয় স্বার্থ রক্ষার আড়ালে গ্লোবাল দক্ষিণকে অর্থনৈতিকভাবে চাপে ফেলতে চায়। তবে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ব্রিক্স সদস্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তিনি ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন।
এই মুহূর্তে প্রশ্ন হচ্ছে, ব্রিক্স কি শুধু কূটনৈতিক বিবৃতি দিয়ে থেমে থাকবে, না কি ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে কঠোর পাল্টা বাণিজ্যিক পদক্ষেপে যাবে? আলোচনায় রয়েছে পাল্টা শুল্ক আরোপ, ডলারের বিকল্প মুদ্রা ব্যবহার এবং বাণিজ্যিক চুক্তিতে বৈচিত্র্য আনার মতো বিষয়গুলো।
বিশ্ব রাজনীতিতে এই উত্তেজনা ভবিষ্যতে এক নতুন বাণিজ্যিক শীতল যুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
শেখ ফরিদ